দরপত্র ডাকার আগেই রাজশাহীতে গণপূর্ত বিভাগের একটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণকাজ শেষের দিকে এসে আহ্বান করা হয়েছে দরপত্র। পছন্দের ঠিকাদারই কাজ করছেন। নির্মাণাধীন ভবনটি ছয় কক্ষের। পরে সম্পাদিত চুক্তিপত্রে কাজের চুক্তির মূল্য দেখানো হয়েছে প্রায় ১৯ লাখ টাকা। তবে দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা বলছেন, এটা তাঁদের ছোট একটি জরুরি মেরামতের কাজ।
গত ৯ মে দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ২৬ মে। ই-জিপি পোর্টালে লেখা রয়েছে—‘টেন্ডার নম্বর ৯৭৯১১৪; ভার্টিক্যাল এক্সটেনশন; ওপেন টেন্ডার মেথড’।
রাজশাহীতে গণপূর্ত বিভাগ-১–এর সহকারী প্রকৌশলীদের অফিসকক্ষ ও গ্যারেজ শেডের ওপর ছয় কক্ষবিশিষ্ট পাকা ভবন নির্মাণ প্রায় শেষের দিকে। এখন শুধু আসবাব ও ফিনিশিংয়ের কাজ বাকি। গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কোনো দরপত্র ডাকা ছাড়াই এই কাজ শুরু করা হয়।
আজ সোমবার সকালে রাজশাহী নগরের শ্রীরামপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দরজার চৌকাঠ ও জানালার গ্রিল লাগানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
গণপূর্ত বিভাগের একাধিক কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাইকেল গ্যারেজের ওপরে দোতলা কক্ষগুলোর ছাদ ঢালাইয়ের কাজ গত বছরের শেষ দিকে সম্পন্ন হয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে দেয়াল নির্মাণ ও প্লাস্টার করা হয়। যেখানে আছে বিশাল আকারের অন্তত ছয়টি কক্ষ।
দরপত্র ডাকা হলেও এই কাজ পেয়েছে মেরাজ ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর মালিক মোশাররফ হোসেন বলেন, ৬ জুন এই কাজের চুক্তিপত্র সই হয়েছে। চুক্তির মূল্য কত জানতে চাইলে তিনি সঠিকভাবে বলতে পারেননি। এটি ১৮ লাখ ৯৩ হাজার টাকা হতে পারে। আগে থেকে কাজ শুরুর ব্যাপারে তিনি বলেন, তাঁর লাইসেন্সে সঞ্জয় নামের একজন ঠিকাদার কাজ করছেন।
এ বিষয়ে জানার জন্য মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সঞ্জয় কুমার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ঝুঁকি নিয়েই দরপত্র আহ্বানের আগে কাজটা শুরু করেছিলেন। বিভাগ মানা করেছিল। তারপরও তাঁরা কাজটা করছিলেন। দরপত্রে অন্য ঠিকাদার কাজ পেলে, সে ক্ষেত্রে কী করবেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁরা তো প্রত্যেকেই ঠিকাদার। নিজেদের মধ্যে একটা কথা হয়েছে।
দরপত্র আহ্বান ছাড়াই কীভাবে ভবন নির্মাণকাজ শুরু করা হলো, জানতে চাইলে আজ সকালে রাজশাহীর গণপূর্ত বিভাগ-১–এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হারুন অর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, এটা তাঁদের ছোট একটি মেরামতের কাজ। দরপত্র ডাকা হয়েছে। জুন ক্লোজিংয়ের জন্য তাড়াতাড়ি শুরু করতে গিয়ে চুক্তিপত্র সই হওয়ার আগেই ঠিকাদার কাজ শুরু করেছেন।
গত বছরের অক্টোবরে ভবনটির ছাদ ঢালাই চলছিল। আর দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে গত মে মাসে। এটা কীভাবে হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে মো. হারুন অর রশিদ বলেন, অফিসে গেলে তিনি এ ব্যাপারে বুঝিয়ে বলতে পারবেন।
রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল গোফফার বলেন, চোখের সামনেই যেহেতু কাজটা হচ্ছে, তাই ভেবেছিলেন নিয়ম অনুযায়ী দরপত্র আহ্বান করেই হচ্ছে। কিন্তু গত রোববার তিনি শুনেছেন যে দরপত্র না ডেকেই কাজটি শুরু করা হয়েছে। এটি একটি অনিয়ম।