‘নিক্সন (ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী) নিজেকে সিংহ মনে করেন, তাঁকে আবার ভোট দিলে আপনাদের চাবাইয়া খাইয়া ফেলবেন।’
ফরিদপুরের ভাঙ্গার এক উঠান বৈঠকে আজ বুধবার উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে এসব কথা বলেন ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ। সকাল নয়টার দিকে ভাঙ্গার মানিকদহ ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের ফাজিলপুর গ্রামের মঞ্জু খানের বাড়িতে ওই উঠান বৈঠক হয়। ওই ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ওই বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিলে সে ভোট আমি পাব। আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নাই। আমাকে ভোট দিলে আপনারাই লাভবান হবেন। যাঁরা বড় বড় কথা বলেন, উন্নয়ন বলতে কী বোঝায়, তা তাঁরা জানেন না। আমার বাবা কাজী মাহবুব উল্লাহ পাকিস্তান আমলে ট্রাস্টের মাধ্যমে ভাঙ্গায় একটি ডিগ্রি কলেজ করেছেন।
‘আরে নিক্সন সাহেব, আপনি তো ক্লাস নাইন পর্যন্ত পড়েছেন’ মন্তব্য করে কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘আপনার কাছে তো এগুলো উন্নয়ন নয়। আপনি বালু কেটে বাড়ি বানিয়েছেন, বালু কেটে হাজার হাজার বিঘা জমির মালিক হয়েছেন বলে শুনেছি। এগুলো কোনো উন্নয়ন নয়। এগুলো আপনার ব্যক্তিগত উন্নয়ন, এ উন্নয়ন জনগণের কোনো উপকারে আসবে না। গরিব মানুষের কয়টা ছেলেকে সরকারি চাকরি দিয়েছেন, সেই তালিকা থাকলে দেন।’
কাজী জাফর উল্যাহ আরও বলেন, ‘অবৈধভাবে মাটি কেটে, অবৈধভাবে বালু কেটে সেই টাকা দিয়ে কিছু লোকজন পোষেন। আবার জমিদারি প্রথা স্থাপন করতে চান। ব্রিটিশ আমলে জমিদারি প্রথা ছিল। ব্রিটিশরা তাদের মাধ্যমে প্রজাদের ওপর জুলুম করে খাজনা আদায় করত। তারা টিকতে পারে নাই। জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হইয়া গেছে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বলেন, ‘শেখ হাসিনা মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত বিনা মূল্যে বই দিচ্ছেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অবৈতনিক করে দিয়েছেন। রাস্তাঘাট করে দিচ্ছেন। এ রাস্তাঘাট হচ্ছে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায়। কোনো এমপি এগুলো করে দেননি। অথচ উনি (নিক্সন) স্কুলে স্কুলে গিয়ে বলেন, তিনি নাকি বই দিচ্ছেন, রাস্তা করে দিচ্ছেন। এগুলো মিথ্যা কথা। মিথ্যার কাথা বেশিক্ষণ গায়ে থাকতে পারে না। এমপি সাহেবকে জিজ্ঞাসা করেন, নিজের টাকায়, বালু বেচা হলেও তো নিজের টাকা, ওই টাকা দিয়ে তিনি কোথায় কয়টা কলেজ করেছেন, কয়টা হাসপাতাল করেছেন। নিক্সনের নির্বাচন করে টাকা দিয়ে কেনা লোক, টাকা থাকলে তারা থাকে, না থাকলে থাকে না। নিক্সন গরু-ছাগলের মতো আপনাদের মাথা কিনতে চায়। যারা টাকা দিয়ে মাথা কেনে, তারা কখন ভালো কাজ করে না, আপন লোক হবে না।’
কাজী জাফর উল্যাহ আরও বলেন, ‘তিনি ব্রিটিশদের মতো এসেছেন শিবচর থেকে, এই জেলাও নয়, আসছেন মাদারীপুর থেকে। শুনেছেন এখানে কিছু গরু-ছাগলের হাট আছে, মানুষ কেনা যায় অল্প টাকায়, সে জন্য এসেছেন। এটা আমাদের জন্য লজ্জার ব্যাপার। ভাঙ্গার লোক টাকায় বিক্রি হয় না, তবে কিছু বেইমান, নমরুদ টাকায় বিক্রি হয়। তারা টাকা ছাড়া কিছু বোঝে না, তারা টাকার রাজনীতি বোঝে।’
নিজের কোন চাওয়া পাওয়া নেই মন্তব্য করে কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, তিনি নির্বাচিত হলে বাবার রেখে যাওয়া শত শত কোটি টাকা দিয়ে পদ্মা সেতুর এপাড়ে ভাঙ্গায় একটি হাসপাতাল করে দেবেন। পাশাপাশি প্রতিটি পরিবারে যেসব শিক্ষিত ছেলে আছেন, তাঁদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেবেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন মানিকদহ ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারা বেগম। বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুজ্জামান, ইউপি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল মাতুব্বর, মহিলা আওয়ামী লীগ কর্মী রেহানা পারভীন প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী জাফর উল্যাহকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নিক্সন।