ভারতের কলকাতায় শিক্ষানবিশ চিকিৎসক মৌমিতা ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। দ্বিতীয়বারের মতো রাত দখল কর্মসূচি পালন করেছেন তাঁরা। কর্মসূচি থেকে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পাঁচটি দাবি তুলে ধরে হয়।
‘মেইফুয়া অক্কল রাইত দহল গরো’ (মেয়েরা সবাই রাত দখল করো) স্লোগানে সোমবার রাত আটটায় চট্টগ্রাম নগরের কাজীর দেউড়ি এলাকার মুক্তমঞ্চে এই কর্মসূচি শুরু হয়। চলে রাত দশটা পর্যন্ত। এর আগে শুক্রবার নগরের দুই নম্বর গেট এলাকায় একই কর্মসূচি হয়েছিল।
নারীরা রাস্তায় চলাচল করলে কেন বৈষম্যের শিকার হবেন? নারীদের চলাচলে সমাজ কেন সময় বেঁধে দেবে? কেন পুরুষের মতো নির্ভয়ে নারীরা চলাচল করতে পারবে না? কর্মসূচিতে এসব প্রশ্ন তোলেন বক্তারা।
রাত দখল কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান নেন। এসবে লেখা ছিল ‘ধর্ষকেরা নিপাত যাক, নারীরা মুক্তি পাক’, ‘আমরাই নারী, আমরাই পারি’, ‘নারী হাতে অস্ত্র তোলো, ধর্ষকদের বিনাশ করো’, ‘আমার বোনের হত্যাকারীর, শাস্তি চাই শাস্তি চাই’, ‘আমার বোনের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’,‘ তোমার আমার এক কথা, নারীদের নিরাপত্তা’ ইত্যাদি স্লোগান।
কর্মসূচির অন্যতম আয়োজক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুজহাত তাবাসসুম বলেন,‘আমরা নারীরা চাই আট-দশটা পুরুষের মতো যেন গণপরিবহনে চড়তে পারি। পুরুষেরা যেমন ভয় ছাড়া রাস্তায় হাটে, তেমনি নারীরা যেন হাটতে পারে। রাস্তা নিরাপদ না, এ কথা বলে যেন সমাজ নারীদের আটকে না রাখে। নারী-পুরুষ চলাচলে যেন বৈষম্য না থাকে এটি আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।’
চট্টগ্রাম আইন কলেজের শিক্ষার্থী অ্যানি চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশে যখন ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটে। এটি যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হয় তখন এর কমেন্ট সেকশনে গিয়ে দেখি কীভাবে ভুক্তভোগীকে উল্টো দোষারোপ করা হয়। শুধু ফেসবুকে নয়। সব জায়গাতেই এই প্রবণতা দেখতে পারি। এই অবস্থা সমাজের কারণে হয়েছে। সমাজ থেকেই এই ধরনের নিম্ন মানসিকতা গড়ে উঠে। টিভি, সিনেমা, নাটক, বিজ্ঞাপন সবকিছুতেই নারীদের নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়। এগুলোও এই ধরনের নিচু মনমানসিকতার জন্য দায়ী।’
কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন শিক্ষানবিশ আইনজীবী সাইফুর রুদ্র, শিক্ষার্থী সাহরিয়া তাসনিম ও জশদ জাকির প্রমুখ৷
কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে পাঁচটি দাবি তুলে ধরেছেন। এগুলো হলো— ১. তনু, মুনিয়া, নুসরাতসহ প্রতিটি ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করা। পাশাপাশি নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা ১৮০ দিনের মধ্যেই নিষ্পত্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা।
২. স্কুল-কলেজের পাঠ্যক্রমে ‘কনসেন্ট’ (পারস্পরিক সম্মতি) এর গুরুত্ব ও যৌন-শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা।
৩.বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারীদের জন্য আরোপিত লিখিত অথবা অলিখিত ‘সান্ধ্য-আইন’ বাতিল করা। পাশাপাশি সব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে কার্যকর যৌন-নিপীড়ন বিরোধী সেল প্রতিষ্ঠা করা।
৪. বিদ্যমান সাক্ষ্য আইন ১৮৭২ এর ১৫৫(৪) ধারা বাতিল করা।
৫. ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও অসংখ্যাগরিষ্ঠ নারীদের প্রতি সহিংসতা রোধে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।