সিলেট জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত শোভাযাত্রায় বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন
সিলেট জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত শোভাযাত্রায় বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন

বর্ণিল আয়োজনে নতুন বছরকে বরণ করে নিল সিলেটবাসী

বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে পুরোনোকে পেছনে ফেলে নতুন বছর ১৪৩০ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিয়েছে সিলেটের মানুষ। আজ শুক্রবার সকাল থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নানা বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে পুরো নগরী।

সিলেট জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আজ সকাল সাড়ে ৯টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে শোভাযাত্রাটি নগরের রিকাবিবাজার এলাকার কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে গিয়ে শেষ হয়। পরে মুক্তমঞ্চে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এ আব্দুল মোমেন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট মহানগরের সাবেক কমান্ডার ভবতোষ রায় বর্মণ, সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ, জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন, সিলেট ডিআইজি রেঞ্জ কার্যালয়ের পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা প্রমুখ। এ ছাড়া বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, সংস্কৃতি সংগঠনের সদস্য ও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ শোভাযাত্রায় অংশ নেন।

শ্রুতি সিলেট আয়োজিত বর্ষবরণ উৎসবে নৃত্য পরিবেশন করছেন শিল্পীরা। আজ সকালে ব্লু-বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে

এদিকে সকাল সাড়ে আটটায় সাংস্কৃতিক সংগঠন পাঠশালা ও সুবর্ণযাত্রার আয়োজনে শিশুদের নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি কবি নজরুল অডিটোরিয়াম থেকে শুরু হয়ে সুবিদবাজার এলাকার ব্লু-বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় মুখোশ, প্যাঁচা, ঢোল, তবলা, প্রতিকৃতি আঁকা ফেস্টুন নিয়ে অংশ নিতে দেখা যায় অনেককে। ব্লু-বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে বাংলার নতুন বর্ষকে বরণ করতে নানা আয়োজন করে সিলেটের সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রুতি।

জেলা প্রশাসনের মঙ্গল শোভাযাত্রায় শিশুরাও বিভিন্ন সাজে অংশ নেয়

সিলেটের রবীন্দ্রসংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আনন্দলোকের আয়োজনে বর্ষবরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। আনন্দলোকের পরিচালক রানা কুমার সিনহার পরিচালনায় সকাল ৯টায় সিলেট নগরের কেওয়াপাড়া এলাকার শ্রীহট্টা সংস্কৃত কলেজ প্রাঙ্গণে এ আয়োজন করা হয়। সকালে আয়োজনের উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী হিমাংশু বিশ্বাস। এতে অংশ নেয় বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা, জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ, সিলেট গীতবিতান বাংলাদেশ, সুরাঞ্জলী, চারুবাক ও নৃত্যশৈলী।

সম্মিলিত নাট্য পরিষদের বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ

বর্ষবিদায় ও বরণ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেটের সুরমা নদীর পাড়ে চাঁদনীঘাটে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সিলেটের সম্মিলিত নাট্য পরিষদ। ১৪২৯ বঙ্গাব্দকে বিদায় জানিয়ে নববর্ষ ১৪৩০ বঙ্গাব্দকে স্বাগত জানাতে নানান রঙের কাগজের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছি চাঁদনীঘাট সুরমা নদীর পাড়। শিশু থেকে নানান বয়সের শ্রেণি–পেশার মানুষ এতে উপস্থিত ছিলেন।

সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি রজতকান্তি গুপ্তের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদের সঞ্চালনায় আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে। মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বালন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ভবতোষ রায় বর্মণ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নাট্য পরিষদের প্রধান পরিচালক অরিন্দম দত্ত চন্দন, অন্যতম পরিচালক অনুপ কুমার দেব, অর্ধেন্দু কুমার দাশ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আল আজাদ, এনায়েত হাসান, উত্তম সিংহ, নাট্য পরিষদের সাবেক সভাপতি নিরঞ্জন দে, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুল বাসিত শেরো, কার্যনির্বাহী কমিটির সহসভাপতি সুপ্রিয় দেব শান্ত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এখলাছ আহমেদ তন্ময়, অর্থ সম্পাদক অচিন্ত কুমার দে।

অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেয় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সিলেট জেলা সংসদ, কথাকলি সিলেট, নগরনাট সিলেট, পাঠশালা, তারণ্য, মৃত্তিকায় মহাকাশ সিলেট। নতুন বছরে একটি দুর্বার সাংস্কৃতিক জাগরণের মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক উন্নত বাংলাদেশের পথে অগ্রসর হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বক্তারা।