প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছেন। আজ রোববার বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করেন। এর আগে ৬ জুন শিক্ষার্থীরা কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে একই কর্মসূচি পালন করেছিলেন।
কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে অংশ নেন। এসব প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘মেধাবীদের কান্না আর না আর না’, ‘কোটাবৈষম্য নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘কোটা প্রথায় নিয়োগ পেলে, দুর্নীতি বাড়ে প্রশাসনে’, ‘মেধাবীদের যাচাই করো, কোটাপদ্ধতি বাতিল করো’ ইত্যাদি।
কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য দেন অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী। পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী আমানুল্লাহ আমান বলেন, তাঁদের আন্দোলন একেবারে কোটা বাতিলের দাবিতে নয়। বাংলাদেশে কোটা থাকবে না, তাঁরা তা-ও বলছেন না। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা কোটায় এতসংখ্যক মানুষ সুযোগ পাবেন, তা বৈষম্যমূলক। তাঁরা চান সরকারি চাকরিতে ১০ শতাংশ কোটা থাক।
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে সব গ্রেডে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কোটা রেখে কোটা পুনর্বণ্টন বা সংস্কার করতে হবে। পরীক্ষায় কোটা-সুবিধা একাধিকবার ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোয় মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে।’
সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী আলফাজ উদ্দিন বলেন, ‘ভালো করে দেখলে দেখা যাবে, সব ধরনের নিয়োগ পরীক্ষায়, ভর্তি পরীক্ষায় কোটার ছড়াছড়ি। এতে করে অনেক মেধা ঝরে যায়। কোটা রাখা যেতে পারে, তবে মেধাবীদের মূল্যায়ন করতে হবে। মেধাবীদের কথা ভাবতে হবে।’
রাবি শাখা ছাত্র ইউনিয়নের যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিবুল হাসান বলেন, বাংলাদেশের বর্তমানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ আছে ২০ লাখ। তাঁদের কোটা রাখার প্রয়োজন রয়েছে।
এ সময় রাকসু আন্দোলনের মঞ্চের সদস্যসচিব আমানুল্লাহ আমান বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে। আজকে আমাদের দুটি দাবি। প্রথমটি হলো, আমরা চাই কোটা থাকুক, তবে তা ১০ শতাংশের বেশি নয়। আর দ্বিতীয় দাবি হলো, একবারই কোটা ব্যবহার করা যাবে। এর বেশি ব্যবহার করতে পারবেন না।’
শিক্ষার্থীরা বলেন, চাকরিতে কোটাব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে বড় ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল। সেই আন্দোলনের জেরে এক পরিপত্রের মাধ্যমে কোটাব্যবস্থাই বাতিল করে দেওয়া হয়। সম্প্রতি এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটার অংশটি বাতিল করেন উচ্চ আদালত। এরপর আবারও শুরু হয়েছে আন্দোলন। ৫ জুন সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন উচ্চ আদালত। ওই দিন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। এ অবস্থায় আদালতের ওই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আবেদনটির ওপর শুনানির জন্য ৪ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।