বগুড়ায় দলীয় কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মিজানুর রহমানকে (৪০) কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাত নয়টার দিকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে গোকুল ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সংলগ্ন মাজারের কাছে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মিজানুর উপজেলার গোকুল উত্তরপাড়ার আফসার আলীর ছেলে। গোকুল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন যুবদলের সদ্য বহিষ্কৃত আহ্বায়ক সুমন আহমেদ (বিপুল) এ হামলায় নেতৃত্ব দেন বলে মিজানুরের সঙ্গী ও স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন।
এদিকে হামলার সময় ল্যাদো (৩৫) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে পিটুনি দেন মিজানুরের সমর্থকেরা। তাঁর বাড়িও গোকুল উত্তরপাড়ায়। তিনি যুবদল নেতা সুমনের চাচাতো ভাই ও যুবদলের কর্মী। গুরুতর আহত ল্যাদোকে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। রাত ১১টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ল্যাদোর ওপর হামলা করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী–সমর্থকেরা। এতে ল্যাদোর মৃত্যু হয়।
এ সময় হামলাকারীরা হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করেন। এসব দৃশ্য ধারণ করতে গেলে সাংবাদিকদের ওপরও হামলা করা হয়। এতে চারজন সাংবাদিক আহত হন। যমুনা টেলিভিশনের বগুড়া ব্যুরোপ্রধান মেহেরুল সুজন বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
নিহত মিজানুর সদর উপজেলার গোকুল উত্তরপাড়ার আফসার আলীর ছেলে। গোকুল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন যুবদলের সদ্য বহিষ্কৃত আহ্বায়ক সুমন আহমেদ (বিপুল) এ হামলায় নেতৃত্ব দেন বলে মিজানুরের সঙ্গী ও স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন।
এ সম্পর্কে বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইহান ওলিউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বহিষ্কৃত যুবদল নেতা বিপুলের (সুমন আহম্মেদ) নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মিজানুর হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ঘটনায় হামলাকারীদের মধ্যে ল্যাদো নামের একজনকে আটকের পর স্থানীয় লোকজন পিটুনি দিয়ে গুরুতর আহত করেন। তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশের গাড়িতে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাত নয়টার দিকে গোকুলে ট্রাক বন্দোবস্তকারী সমিতির কার্যালয়ের জন্য ভাড়া নেওয়া ঘরেই সঙ্গীদের নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মিজানুর রহমান। তখন বিদ্যুৎ ছিল না। এ সময় ৮-১০টি মোটরসাইকেলে এসে ১৮-২০ জন মিজানুরের ওপর হামলা করেন। হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মিজানুরকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। তাঁকে প্রথমে টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর রাত ১০টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মিজানুরকে মৃত ঘোষণা করেন।
মিজানুর রহমানের ওপর হামলার সময় সুমন আহমেদের চাচাতো ভাই ল্যাদো নামের একজনকে আটক করে স্থানীয় লোকজন। পিটুনিতে গুরুতর আহত হন ল্যাদো। সেনা ও পুলিশ সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে রাত ১১টার দিকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
হাসপাতালে প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি বলেন, মিজানুর নিহত হওয়ার খবরে হাসপাতাল চত্বরে তাঁর কয়েক শ বিক্ষুব্ধ সমর্থক জড়ো হন। তাঁরা পুলিশের গাড়ি থেকে আহত ল্যাদোকে জরুরি বিভাগে নেওয়ার সময় হামলা করেন। এর মধ্যেই পুলিশ তাঁকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। সেখানেও হামলা করেন নিহত মিজানুরের সমর্থকেরা। চিকিৎসা দেওয়ার আগেই ল্যাদোর মৃত্যু হয়। পরে সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
ল্যাদো নামের একজনকে জরুরি বিভাগে নিতে ফটকে বাধা দেন মিজানুরের সমর্থকেরা। তাঁরা ওই ব্যক্তিকে মারধর করতে করতে ভেতরে নিয়ে আসেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে (ল্যাদো) মৃত অবস্থায় পেয়েছেন।আবদুল ওয়াদুদ, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, মিজানুরকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত অবস্থায় পেয়েছেন। পরে আনা হয় ল্যাদো নামের একজনকে। তাঁকে জরুরি বিভাগে নিতে ফটকে বাধা দেন মিজানুরের সমর্থকেরা। তাঁরা ওই ব্যক্তিকে মারধর করতে করতে ভেতরে নিয়ে আসেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে (ল্যাদো) মৃত অবস্থায় পেয়েছেন।
আবদুল ওয়াদুদ আরও বলেন, হামলাকারীরা মারধরের প্রমাণ মুছে ফেলতে জরুরি বিভাগের ফটকে ও ভেতরে সিসিটিভির দুটি ক্যামেরা ভাঙচুর করেছে। জরুরি বিভাগের কাচ ভাঙচুর করা হয়েছে।