সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নবনিযুক্ত সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এ টি এম ফয়েজ উদ্দিনের নিয়োগ বাতিলের দাবিতে তাঁর কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। এ সময় বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নবনিযুক্ত পিপি এম মজিবুর রহমানের কার্যালয়ও তালাবদ্ধ করেন।
আজ রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিলেট জেলা ইউনিটের নেতারা। পরে বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা বেলা পৌনে একটার দিকে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এ সময় তাঁরা নবনিযুক্ত পিপি এ টি এম ফয়েজকে পরিবর্তনের দাবি জানান।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিলেটের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মুহিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বদরুল আহমদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আক্তার হোসেন খান, মহানগর বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ সিদ্দিকী, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ আশরাফুল ইসলাম, মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি হাবিবুর রহমান, জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আহমদ পাটওয়ারী, আইনজীবী মোমিনুল ইসলাম, সাঈদ আহমদ, আবদুল ফাত্তাহ তুহেল, এজাজ উদ্দিন, আনছারুজ্জামান, মোস্তাক আহমদ ও উবাদুর রহমান প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, নবনিযুক্ত পিপি এ টি এম ফয়েজ একজন বিতর্কিত ব্যক্তি। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে বিএনপিতে এলেও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দীর্ঘ আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। দলে তাঁর সাংগঠনিক নিষ্ক্রিয়তা, অনুপস্থিতি ও দলীয় নেতা-কর্মীদের আইনি সেবাদানে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে একসময় আইনজীবী ফোরামের সভাপতির পদ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
আইনজীবী এ টি এম ফয়েজ দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী হয়ে স্থায়ীভাবে সপরিবার সেখানে চলে যান বলেও আইনজীবীরা অভিযোগ করেন। তাঁরা বলেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর দেশে ফিরে ফয়েজ পিপি হওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন এবং সংশ্লিষ্টদের ভুল বুঝিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদটি বাগিয়েও নেন।
অভিযোগের বিষয়ে নবনিযুক্ত পিপি ও জেলা বিএনপির উপদেষ্টা এ টি এম ফয়েজ গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘পাওয়া না-পাওয়ার বেদনায় ৮ থেকে ১০ জন প্রতিবাদ করেছেন। একসময় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ করেছি ঠিক। তবে ২২ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতিতে ওতপ্রোতভাবে আমি জড়িত।’
এদিকে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের কর্মসূচি চলাকালে আজ বেলা একটার দিকে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবী কানন আলম লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কানন আলম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার পাশাপাশি প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এর পর থেকে তিনি যেন আদালতে না যান, সেই হুমকিও দেওয়া হয়। তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
তবে কানন আলমের অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন বিএনপিপন্থী একাধিক আইনজীবী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, ঘটনাচক্রে ওই সময় কানন আলমের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ কিছু তরুণ আইনজীবীর কথা–কাটাকাটি হয়। এর বাইরে কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
এর আগে গত বুধবার রাতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের (সলিসিটর উইং) উপসলিসিটর (জিপি-পিপি) সানা মো. মাহ্রুফ হোসাইন স্বাক্ষরিত এক আদেশে সিলেট জেলা ও সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে ১০৩ জন সরকারি কৌঁসুলি নিয়োগ দেয় আইন মন্ত্রণালয়।
এদিকে সিলেটের জেলা ও মহানগর আদালতগুলোতে পিপি-জিপি নিয়োগে প্রকাশিত ‘বিতর্কিত তালিকা’ বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল সিলেটের নেতারা। আজ দুপুরে আদালত চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
সংগঠনটির সিলেটের সভাপতি মো. আলীম উদ্দীনের সভাপতিত্ব ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবদুল খালিকের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন সেক্রেটারি মোহাম্মদ আব্দুর রব, যুগ্ম সম্পাদক আজীম উদ্দীন ও জামিল আহমদ রাজু, সহকারী সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন শামীম, আইনজীবী সিরাজুল ইসলাম, মাসুদ আহমদ মহসিন, জুনেদ আহমদ, ইয়াসিন খান, নাজমুল ইসলাম, নাজমুল হুদা, আবজল মিয়া তালুকদার, রহমত আলী, আসাদুল্লাহ ও আমিনুল ইসলাম চৌধুরী রেদওয়ান প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সিলেটের আদালতে পিপি ও জিপি হিসেবে যাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। নিয়োগপ্রাপ্ত পিপি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে প্রবাসে ছিলেন। এ ছাড়া নিয়োগপ্রাপ্ত আইন কর্মকর্তাদের তালিকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনবিরোধী ও ফ্যাসিবাদের দোসররাও স্থান পেয়েছেন, যা খুবই দুঃখজনক। আদালতের পরিবেশ ও সুষ্ঠু বিচারকাজ পরিচালনার স্বার্থে পিপি ও জিপি তালিকা বাতিল করে আইন পেশায় সৎ, দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে নতুন তালিকা প্রকাশের জন্য দাবি জানান তাঁরা।