আরও একজন গ্রেপ্তার, অন্য আসামিদের এখনো জিজ্ঞাসাবাদই শুরু হয়নি

বগুড়ার শাজাহানপুর থানায় হামলার প্রধান হোতা ‘নুরু বাহিনীর’ প্রধান নুরুজ্জামান
ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ার শাজাহানপুর থানায় হামলার ঘটনায় নতুন করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের আরও এক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে মামলার এজাহারে তাঁর নাম নেই। তদন্তে নাম আসায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। এ নিয়ে থানায় হামলা মামলা ও অস্ত্র আইনে দায়ের হওয়া দুই মামলায় গ্রেপ্তার আসামির সংখ্যা দাঁড়াল ১৩।

সর্বশেষ গ্রেপ্তার ওই ব্যক্তির নাম আমিনুল ইসলাম ওরফে সোহাগ। তাঁর বাড়ি শাজাহানপুর উপজেলার মাদলা গ্রামে। তিনি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। আজ শুক্রবার গ্রেপ্তার আমিনুলকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে পৃথক ওই দুই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রধান আসামি ‘নুরু বাহিনীর’ প্রধান মো. নুরুজ্জামানের ছয় দিনের রিমান্ড এবং একই সঙ্গে তাঁর আট সহযোগীর প্রত্যেককে একটি মামলায় তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হলেও এখন পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ শুরুই করতে পারেনি ডিবি। মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতিও নেই। থানায় হামলা মামলার আসামিরা এলাকায় দাপটের সঙ্গে ঘুরে বেড়ালেও ডিবি বলছে, আসামিদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

গত মঙ্গলবার শুনানি শেষে বগুড়ার জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-৩-এর বিচারক বেগম সঞ্চিতা ইসলাম দুই মামলায় নুরুজ্জামানকে ৬ দিন এবং অন্যদের ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মো. নুরুজ্জামান শাজাহানপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলার মাঝিড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। ৬ এপ্রিল রাতে দলবদ্ধভাবে শাজাহানপুর থানায় ঢুকে অস্ত্র মামলার আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনার মূল হোতা তিনি। ঘটনার পর নুরুজ্জামান ও তাঁর সহযোগীদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১৫টি গুলিসহ ২টি বিদেশি পিস্তল, মাদক ও দেশি অস্ত্র জব্দ করে পুলিশ। এ ঘটনায় ৪৫ জনকে আসামি করে পৃথক আইনে দুটি মামলা হয়। দুটি মামলারই প্রধান আসামি নুরুজ্জামান।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নুরুজ্জামানসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে নয়জনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। নুরুজ্জামান ছাড়া রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া আসামিরা হলেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি সাইদুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক বোরহান উদ্দিন, আড়িয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক (সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত) মিঠুন হাসান, কর্মী সাদ্দাম রবীন, রমজান আলী, মিরাজুল রহমান, আমিনুল ইসলাম ও মিঠুন মিঞা।

এ ছাড়া গ্রেপ্তার অন্য চারজন হলেন নুরুজ্জামানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও ব্যবসায়িক অংশীদার উপজেলার সাজাপুর গ্রামের আলমগীর হোসেন (৪০), মোস্তাইল গ্রামের সুজন ইসলাম (২২)।

জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য রাসেল আলী (৩৪) এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, থানায় হামলা এবং পরে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুই নেতার বাড়ি থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের মামলা দুটির তদন্তভার থানা-পুলিশের কাছ থেকে ৯ এপ্রিল ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। ১৫ এপ্রিল ডিবির উপপরিদর্শক আবু জাফরকে থানায় হামলা মামলার এবং উপপরিদর্শক আশিকুর রহমানের ওপর অস্ত্র মামলার তদন্তভার ন্যস্ত করা হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে তদন্তে পাওয়া একজন আসামিকে গ্রেপ্তার ছাড়া এখন পর্যন্ত মামলার তেমন কোনো অগ্রগতি করতে পারেনি ডিবি।

ডিবির সূত্র জানায়, অস্ত্র মামলায় প্রধান আসামি নুরুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে। ওই মামলার অপর আসামি হাসান নাজমুল পলাতক আছেন। এ ছাড়া থানায় হামলা মামলায় গ্রেপ্তার ৯ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রত্যেকের ৩ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে। তবে রিমান্ড মঞ্জুর করা আসামিদের এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। এদিকে থানায় হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া শাজাহানপুর উপজেলার খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের ঘাষিড়া গ্রামের শামীম রেজাকে ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হলেও এখনো সে গ্রেপ্তার হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা আক্ষেপ করে বলেন, ‘মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ওমর ফারুক এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাঁর দাপটে তটস্থ এলাকাবাসী। তাঁর চাঁদাবাজি আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অসহায় সাধারণ মানুষ।’

১৪ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টার দিকে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের খরনা-বাঁশবাড়িয়া এলাকায় জাহিদ হাসান নামের একজন মারধর করে টাকা ও গাড়ির কাগজপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া ঈদের দিন বিকেলে একই এলাকার টেংগামাগুর স্ট্যান্ডে ওমর ফারুকের নেতৃত্বে পথচারীদের মারপিটের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক মুস্তাফিজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘৯ এপ্রিল মামলার তদন্তভার ডিবিতে ন্যস্ত করা হলেও নথি বুঝে পেয়েছি ১৫ এপ্রিল। গত বুধবার রিমান্ড মঞ্জুর করা হলেও এখনো আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়নি। মামলার এজাহারনামীয় ছাড়াও তদন্তে নাম আসা আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। শামীম রেজা ও ওমর ফারুককে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।’