দিনাজপুরের বিরামপুরে প্রায় তিন বছর আগে এক ইউপি চেয়ারম্যানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রশিদুল ইসলাম নামের এক তরুণের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় সম্প্রতি থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।
মামলায় আসামি হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকসহ ১১৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে। পুলিশ এজাহারভুক্ত চার আসামিসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
২৫ অক্টোবর নিহত ব্যক্তির মামা পরিচয় দিয়ে বিরামপুর থানায় মামলাটি করেন বিপ্লব আলম (৪৭)। স্থানীয়ভাবে তিনি বিলু নামে পরিচিত। বিপ্লব কাটলা ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য। তাঁর বাড়ি উপজেলার কাটলা ইউনিয়নের উত্তর দাউদপুর গ্রামে।
মৃত রশিদুল ইসলামের বাড়ি বিরামপুরের কাটলা ইউনিয়নের দক্ষিণ কাটলার ধানহাটিমোড়ে। তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তাঁরা মামলার বাদী বিপ্লব আলমকে চেনেন না। মামলা করার বিষয়েও তাঁদের জানানো হয়নি। এ বিষয়ে ২৭ অক্টোবর রশিদুল ইসলামের মা রশিদা খাতুন, ভাই শহিদুল ইসলাম ও চাচা মতিয়ার রহমান একটি যৌথ হলফনামা (অ্যাফিডেভিট) বাদীর আইনজীবীর কাছে জমা দিয়েছেন। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘মামলার বাদী বিপ্লব আলম ওরফে বিলু সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলাটি করেছেন। রশিদুলের হৃদ্রোগ ছিল এবং তিনি মানসিক রোগী ছিলেন। ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান রশিদুল। তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের দায়ী করি না। রশিদুলের মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে এজাহার নামীয় বা অজ্ঞাত আসামিরা কোনোভাবেই জড়িত ছিলেন না।’
২৫ অক্টোবর নিহত ব্যক্তির মামা পরিচয় দিয়ে বিরামপুর থানায় মামলাটি করেন বিপ্লব আলম (৪৭)। স্থানীয়ভাবে তিনি বিলু নামে পরিচিত। বিপ্লব কাটলা ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য।
একই দিনে মামলার বাদী বিপ্লব আলম বিরামপুর থানায় আরেকটি হলফনামা দাখিল করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘স্থানীয় রাজনৈতিক দেউনিয়ার (নেতা) চক্রান্তে পড়ে বিরামপুর থানায় গিয়ে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করেছিলাম। পরে জানতে পারি, আমাকে বাদী দেখিয়ে স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকসহ ১১৩ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। পরে আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, রশিদুল ইসলাম হার্টের ও মানসিক রোগী ছিলেন। রশিদুল ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি স্ট্রোক (হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ) করে মৃত্যুবরণ করেন এবং পরে তাঁর পরিবারের লোকজন তাঁর দাফন সম্পন্ন করেন। রশিদুলের মৃত্যুতে তাঁর পরিবারের লোকজনের কোনো আপত্তি নেই। তাঁরা এ মামলায় কোনো বাদী বা সাক্ষী হননি। মামলাটি আমাকে ভুল বুঝিয়ে করানো হয়েছে এবং আমি একজন অশিক্ষিত ব্যক্তি হওয়ায় আমি কোনোকিছু বুঝতে পারি নাই। আমি এ ঘটনার কিছুই জানি না। মামলার আসামিগণ ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত করে এজাহারে বর্ণিত আসামিদের অব্যাহতি দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে আমার বা সাক্ষীগণের কোনো আপত্তি থাকবে না।’
বিপ্লব আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য ২৭ অক্টোবর নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে একটি হলফনামা করেছি। এটি গত সোমবার আদালতে দাখিল করা হয়েছে।’ মামলা করার সঙ্গে রাজনীতি জড়িত কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বিপ্লব আলম বলেন, ‘আমি ওটা বলতে পারব না। এটা নিয়ে অনেক বিষয় আছে। আর আমি বিষয়টি অতখানি জানি না।’
এ বিষয়ে বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমতাজুল হক বলেন, ‘মামলা করার পর ছয় আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। মামলার বাদী বা নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো হলফনামা দাখিল করেছেন কি না, এ বিষয়ে দাপ্তরিকভাবে আমি থানায় কোনো তথ্য পাইনি। আর হলফনামা দাখিল করলেও মামলার তদন্তের ওপর এর কোনো প্রভাব পড়বে না। আইনি প্রক্রিয়ায় মামলার তদন্তকাজ চলবে।’