রাজশাহীর বাঘায় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম মারা গেছেন। আজ বুধবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, গত শনিবার থেকে আশরাফুল ইসলাম হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। রোববার তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয়। তাঁর মস্তিষ্কে ইনফেকশন হয়েছিল। পরে অক্সিজেন লেভেল কমে যায়।
উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহিনুর রহমান বলেন, আশরাফুল ইসলাম এর আগে দুবার উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। এরপর টানা দুবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন।
গত শনিবার উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ৫০ নেতা-কর্মী আহত হন। সেদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষ চলাকালে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে গুরুতর আহত অবস্থায় উপজেলা চত্বরের ভেতর থেকে আশরাফুল ইসলামকে উদ্ধার করা হয়। তাঁর মাথায় ধারালো অস্ত্রের কোপ ছিল।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বাঘা উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ের অনির্বাচিত দলিল লেখক সমিতির কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের জেরে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি থেকে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার শুরু ১০ জুন। এদিন সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ের দলিল লেখক সমিতির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হন। এরপর দলিল লেখক সমিতির কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে ২০ জুন মানববন্ধন করেন বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. লায়েব উদ্দিন ও পৌর মেয়র আক্কাছ আলীর সমর্থকেরা। পাল্টা হিসেবে গত শনিবার সকাল ১০টায় পৌর মেয়র আক্কাছ আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তুলে উপজেলা পরিষদ চত্বরে মানববন্ধনের আয়োজন করেন আশরাফুল ইসলাম ও তাঁর সমর্থকেরা। মেয়র আক্কাছ আলীর নেতৃত্বে একই সময়ে সেখানে অনির্বাচিত দলিল লেখক সমিতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়।
আক্কাছ আলীর সঙ্গে আন্দোলনে ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. লায়েব উদ্দিন, পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম প্রমুখ। তাঁরা গত সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রাহেনুল হকের হয়ে কাজ করেছেন। নির্বাচনে তিনি নৌকার প্রার্থী সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের কাছে পরাজিত হন। শনিবার রাহেনুল হক পক্ষের সমর্থকেরা পৌরসভা কার্যালয়ের ফটকে অবস্থান নেন। আর অন্য পক্ষ পৌরসভা চত্বরের উপজেলা ফটকে মানববন্ধনের আয়োজন করে। এর আয়োজক ছিল উপজেলা আওয়ামী লীগ। এই পক্ষ স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। সেদিন দুই পক্ষকেই লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল, চাপাতি নিয়ে হেলমেট পরে সংঘর্ষে জড়ান। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেটর ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সংঘর্ষের ঘটনায় পরদিন রোববার দুপুরে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহিনুর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেছেন। তিনি দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. শাহরিয়ার আলমের অনুসারী। মামলায় বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাছ আলী, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পাকুড়িয়া ইউপির চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলামসহ ৪৬ জনের নাম উল্লেখ করা রয়েছে। এ ছাড়া ২০০-৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় মেরাজুল ইসলামসহ সাতজন গ্রেপ্তার আছেন।