নোয়াখালীর ভাসানচর থেকে নদীতে সাঁতার কেটে সন্দ্বীপ উপকূল। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে গুপ্তছড়া ঘাট। ঘাট থেকে টিকিট কেটে এমভি আইভি রহমান নামের একটি যাত্রীবাহী জাহাজে ওঠেন তাঁরা। কাজের খোঁজে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় ঢোকার জন্য এই অভিযানে নেমেছিলেন আটজন রোহিঙ্গা নাগরিক। পথে কেউ ধরে ফেলার ভয়ে কোনো যানবাহনও ব্যবহার করেননি। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি।
আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে কুমিরাঘাটে এমভি আইভি রহমান জাহাজ থেকে ওই আট রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করেছে নৌ পুলিশ। এর আগে জাহাজের মাস্টার তাঁদের কক্ষে নিয়ে আটকে রাখেন। পরে তাঁদের কুমিরা নৌ পুলিশ ফাঁড়িতে আনা হয়।
আটক ব্যক্তিরা হলেন মো. সোহেল (১৮), মোহাম্মদ রিয়াজ (১৭), মো. আক্তার হোসেন (১৮), মো. জুবায়ের (১৭), মো. ওমর ফারুক (১৭), মো. জুনায়েদ (১৪), মো. হেলাল উদ্দিন (২২) ও মো. সাদ্দাম হোসেন (১৪)। তাঁরা নোয়াখালীর ভাসানচরের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৪৭ ও ৪৮ নম্বর ক্লাস্টারের বাসিন্দা।
রোহিঙ্গাদের একজন মো. সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল শনিবার সকালে তাঁরা ভাসানচর থেকে সাঁতার কেটে প্রথমে সন্দ্বীপ উপকূলে আসেন। এরপর বিশ্রাম নিয়ে পায়ে হেঁটে গুপ্তছড়া ঘাটের দিকে রওনা হন। পথ না চেনায় তাঁদের অনেকটা সময় লেগে যায়। আজ সকালে তাঁরা গুপ্তছড়া ঘাটে এসে জাহাজের টিকিট কাটেন। জাহাজে চেপে সীতাকুণ্ডে আসার সময় কেউ একজন পুলিশে খবর দেন। পরে জাহাজের মাস্টার তাঁদের কক্ষে নিয়ে আটকে রাখেন।
সোহেল আরও জানান, তাঁদের পরিবার অন্তত ২০ বছর আগে মিয়ানমার থেকে টেকনাফে প্রবেশ করে। সেখানেই তাঁর জন্ম। বাংলাদেশে জেএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন তিনি। মোটামুটি বাংলা ভাষা বলতে পারেন তিনি। ২০১৭ সালে তাঁর দাদা-দাদি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসেন। পরে তাঁরা সুযোগ-সুবিধার জন্য কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকে যান। সেখান থেকে তাঁরা ভাসানচরে স্থানান্তর হন। ভাসানচরে কাজকর্ম নেই বলে মূল ভূখণ্ডে ছড়িয়ে পড়ছেন তাঁরা।
অপর আটক মো. আক্তার হোসেন বলেন, পরিবারের সদস্যরা ভাসানচরে রয়েছেন। তিনি কাজের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামে এসেছেন। কাজ না পেলে আবার কুতুপালং ক্যাম্পে চলে যেতেন তাঁরা।
এ বিষয়ে কুমিরা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ৯৯৯–এ ফোন পেয়ে তাঁরা কুমিরা গুপ্তছড়া নৌপথের যাত্রীবাহী জাহাজে অভিযান চালিয়ে আট রোহিঙ্গাকে আটক করেন। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাঁদের ভাসানচরে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।