সিলেটে যানজটের জন্য দায়ী অপরিকল্পিত নগরব্যবস্থা

ফয়সাল মাহমুদ
ফয়সাল মাহমুদ

সিলেট নগরে সাম্প্রতিক সময়ে যানজট বেড়েছে। এ কারণে নগরবাসীকে দিনরাত যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ মানুষকে আটকে থাকতে হচ্ছে। এ নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে সিলেট মহানগরের উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সাল মাহমুদের সঙ্গে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: সিলেট নগরে সম্প্রতি যানজট বেড়েছে। কারণগুলো বলবেন?

ফয়সাল মাহমুদ: বর্তমান সময়ে কিছু কিছু স্থানে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে সিটি করপোরেশনের ড্রেনেজ কাজ চলমান থাকায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: সিলেট নগরে যানজটের জন্য কোন বিষয়গুলো দায়ী?

ফয়সাল মাহমুদ: সিলেটে যানজটের জন্য মূলত দায়ী অপরিকল্পিত নগরব্যবস্থা। নগরের যানবাহনের সংখ্যার তুলনায় রাস্তা অপ্রতুল। শহরের কিছু স্থানের রাস্তা সংকীর্ণ। এ ছাড়া দুই দফা বন্যার কারণে অনেক জায়গায় রাস্তা ভেঙে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে অনেক সময় বিভিন্ন যানবাহন গর্তে পড়ে বিকল হয়ে পড়ছে। ট্রাফিক পুলিশ তাৎক্ষণিক এসব যানকে রাস্তার পাশে সরিয়ে রাস্তা সচল রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ ছাড়া জনগণের মধ্যে ট্রাফিক–সচেতনতার অভাব থাকায় অনেক সময় যানজটের সৃষ্টি হয়।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: সিলেট নগরের অনেক বিপণিবিতান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। এ কারণে অনেকে রাস্তায় যানবাহন পার্ক করছেন। ট্রাফিক পুলিশ এ ক্ষেত্রে কী ভূমিকা রাখছে?

ফয়সাল মাহমুদ: সিলেট শহরের অধিকাংশ বিপণিবিতান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। এ কারণে বিপণিবিতানে আসা লোকজন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ব্যক্তিগত যানবাহনগুলো রাস্তায় পার্ক করে রাখা হয়। ট্রাফিক বিভাগ এ ক্ষেত্রে অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে।

পাশাপাশি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ট্রাফিক আইন নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বৃহস্পতিবার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ট্রাফিক এডুকেশন নেটওয়ার্ক কার্যক্রম চলমান। এ ছাড়া কেউ যেন রাস্তায় যানবাহন পার্ক না করেন, সেটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা আছে। একইভাবে বিপণিবিতানের সামনে যেন পার্ক না করা হয়, সেটা বিপণিবিতানগুলোর মালিক সমিতিকেও বলা আছে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: শহরের রাস্তায় অবৈধ সিএনজিস্ট্যান্ড ও ফুটপাত বেদখল হয়ে আছে। এসব উচ্ছেদে আপনারা অভিযান চালান কি?

ফয়সাল মাহমুদ: ট্রাফিক বিভাগের অবৈধ সিএনজিস্ট্যান্ড উচ্ছেদের কার্যক্রম চলমান। ফুটপাত দখলমুক্ত করার জন্য ট্রাফিক বিভাগ নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কেউ দোকানের বাইরে মালামাল রাখলে প্রসিকিউশন দাখিল করা হচ্ছে। দোকানের বাইরে অবৈধভাবে যে মালামাল রাখা হচ্ছে, ট্রাফিক পুলিশ কখনো কখনো নিজে উপস্থিত থেকে তা অপসারণ করছে। ফুটপাত দখল করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ভাসমান দোকান উচ্ছেদ করা হচ্ছে। ট্রাফিক বিভাগের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ এসব।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: নগরবাসীর অভিযোগ, নগরে অবৈধ রিকশার অবাধ চলাচল আছে। এতে যানজট বেড়েছে। আপনারা এ ক্ষেত্রে কী ভূমিকা রাখছেন?

ফয়সাল মাহমুদ: গত আগস্ট মাসে ট্রাফিক বিভাগ ৭৭টি টমটম ও ৭৯৪টি ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে। সিলেট নগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা, টমটম ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা প্রচুর পরিমাণ আছে। অথচ রাস্তাগুলো অপ্রশস্ত। ছোট-বড় বিভিন্ন পাড়ামহল্লার গলিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও টমটম ব্যবহার করছে লোকজন। ট্রাফিক বিভাগ নিয়মিত চেকপোস্ট করার মাধ্যমে অবৈধ রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে অনেকটাই এ সমস্যার নির্মূল করেছে। এ কার্যক্রম অব্যাহত।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: সিলেট নগরের যানজট নিরসনে করণীয় কী?

ফয়সাল মাহমুদ: সিলেট একটি ঐতিহ্যবাহী পর্যটননগর। এ শহরের যানজট নিরসনে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এগুলো হচ্ছে শহরের রাস্তাগুলো প্রশস্ত করা, শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিপণিবিতান ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা, সোবহানীঘাট এলাকার সবজির আড়ত শহরের বাইরে স্থানান্তর, শহরের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় ট্রাক পার্ক না করে নির্ধারিত টার্মিনাল শতভাগ ব্যবহার করা, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পর্যাপ্ত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা, ফুটপাত সব সময় নগরবাসীর নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখা, নগরে অপ্রয়োজনীয় ও অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বিভিন্ন স্থাপনা অপসারণ করে রাস্তা প্রশস্ত করা, শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারের অবৈধ স্ট্যান্ড অপসারণ, রেলস্টেশন ও কদমতলী এলাকার যত্রতত্র বাস দাঁড় না করিয়ে রাখা এবং ভাঙাচোরা রাস্তা মেরামত। তবে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে পারলেই যানজট নিরসন করা অনেকটাই সম্ভব হবে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

ফয়সাল মাহমুদ: প্রথম আলোকেও ধন্যবাদ।