কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) মধ্যরাতে প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের র্যাগ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার দিবাগত গভীর রাতে ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ শিক্ষার্থীকে হাতেনাতে ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পুলিশে দেন। রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের ৩৩০ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটি আগামী রোববারের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে বলে জানিয়েছেন হল প্রভোস্ট ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আখতার হোসেন।
অন্যদিকে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের পক্ষে থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আজ বিকেল পাঁচটার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ ফরিদ উদ্দীন। তিনি জানান, পাঁচজন এখনো থানায় আছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতিক্রমে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সাব্বির হোসেন, শেহান শরীফ শেখ, শরিফুল ইসলাম লিমন, কান্ত বড়ুয়া, জিহাদ, শফিউল্লাহ, তরিকুল ইসলাম, মুকুল এবং ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সঞ্চয় বড়ুয়া। তাঁদের মধ্যে সাব্বির, শেহান, লিমন, কান্ত ও সঞ্জয়কে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, গতকাল রাত সাড়ে নয়টার দিকে ভুক্তভোগী নবীন শিক্ষার্থীদের ওই হলের ৩৩০ নম্বর কক্ষে ডাকেন অভিযুক্ত শেহান শরীফ শেখ। পরে সাইম, রাকিবুল, শামীম, রাকিব, হামজা, তারেক, রিশান, তানভীর, মামুনসহ ১২ থেকে ১৩ জন নবীন শিক্ষার্থী ওই কক্ষে যান। তাঁরা সবাই ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। একপর্যায়ে শামীম, সাইম, রাকিবুল ও হামজা—এই চারজনকে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর ওই চারজনের ওপর অভিযুক্ত সাব্বির ও সঞ্চয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান।
ভুক্তভোগী নবীন শিক্ষার্থীরা বলেন, তাঁরা ক্যাম্পাসে এসেছেন মাত্র ১৭ দিন হয়েছে। এই ১৭ দিন ক্যাম্পাসে থাকতে গিয়ে প্রায় দিনই মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। পাঁচ রকমের হাসি দেওয়া, ফোনে কল দিয়ে বাজে ভাষা বলা ও নাচতে বাধ্য করা হয়েছে। এর আগে গত শনিবার রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তাঁদের ১২ জন শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী একটি ছাত্রাবাসে (সাদী অ্যান্ড হাদী) শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন অভিযুক্তরা। এ সময় কয়েকজনকে অশ্লীল অভিনয় করা, মাদক সেবনের অভিনয়, অশ্লীল কবিতা পাঠ ও অশ্লীল কথাবার্তা লিখতে বাধ্য করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকিও দেওয়া হয়। এ সময় সেখানে ছিলেন ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের (ইমেডিয়েট সিনিয়র) শফিউল্লাহ, তরিকুল, মুকুল, সাব্বির, সাকিব, শেহান, কান্ত বড়ুয়া ও জিহাদ।
লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আখতার হোসেন বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ও সহকারী প্রক্টর ফখরুল ইসলাম, হলের আবাসিক শিক্ষক রাসুল-ই-ইলাহী, সদস্যসচিব হলের সহকারী রেজিস্ট্রার জিল্লুর রহমান। আগামী রোববারের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক শাহীনুজ্জামান বলেন, একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে বসা হয়েছে। এই ব্যাপারটা খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। কোনোভাবেই ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।