৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে প্রায় তিন মাস ধরে কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ আছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন পাবনাসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মানুষ। অল্প সময়ে ঢাকার সঙ্গে যাতায়াতের উপায় বন্ধ হয়ে গেছে তাঁদের।
যাত্রী ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাজীরহাট-আরিচা নৌপথের দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার। ২০১৬ সালে এই নৌপথে লঞ্চের পাশাপাশি স্পিডবোট চলাচল শুরু হয়। ভাড়া বেশি হলেও সময় কম লাগায় কিছুদিনের মধ্যেই বাহনটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পরে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই নৌপথে ফেরি চলাচল শুরু হয়। তবে স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার কমেনি। প্রতিদিন এই নৌপথে স্পিডবোটে প্রায় দেড় হাজার যাত্রী পারাপার হতেন।
এই নৌপথের স্পিডবোটগুলোর চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতেন পাবনার বেড়া ও মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। প্রতিদিন যে ৬০টি স্পিডবোট কাজীরহাট ও আরিচার মধ্যে চলাচল করত, সেগুলোর মালিকও ছিলেন তাঁরা। সরকার পতনের পর স্পিডবোট চলাচলের সঙ্গে যুক্ত মালিক ও শ্রমিকদের বেশির ভাগই আত্মগোপনে যান।
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, ক্ষমতার পালাবদলের পর এই নৌপথে স্পিডবোটের চলাচল কারা নিয়ন্ত্রণ করবেন, তা নিয়ে দেখা দেয় মতবিরোধ। কাজীরহাট ও আরিচা এলাকার স্থানীয় বিএনপি নেতারা এ ব্যাপারে কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়েছেন, এমনটাই খবর। তবে কোন পক্ষের কয়টি স্পিডবোট চলবে তা নিয়ে দ্বন্দ্বের অবসান হয়নি। ফলে স্পিডবোট আর চলছে না।
বেড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কাজীরহাট এলাকার ব্যবসায়ী মো. রইজউদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা এই নৌপথে স্পিডবোট পরিচালনা করতেন। জনরোষের মুখে তাঁরা স্পিডবোটগুলো ফেলে আত্মগোপনে আছেন। স্পিডবোট বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তবে স্পিডবোট চালানো নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরোধের বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।
পাবনা শহরের কয়েকজন যাত্রী বলেন, পাবনা থেকে যমুনা সেতু হয়ে ঢাকায় যেতে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা সময় লাগে। যানজট থাকলে অনেক সময় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লেগে যায়। অথচ কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে স্পিডবোটে যাতায়াত করলে সময় লাগে সর্বোচ্চ চার ঘণ্টা। বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলা থেকে বাসে যমুনা সেতু হয়ে ঢাকায় যাতায়াতে স্বাভাবিক অবস্থায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগে। স্পিডবোটে কাজীরহাট-আরিচা নৌপথ হয়ে ঢাকায় যাতায়াতে সময় লাগে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা।
সাঁথিয়ার কাশীনাথপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম ঢাকার সাভারে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি বলেন, স্পিডবোট চালু থাকলে বাড়ি থেকে তিনি সাভারে যেতে পারেন আড়াই থেকে তিন ঘণ্টায়।
কাজীরহাট ফেরিঘাটের স্পিডবোটের চালক বাপ্পী মিয়া বলেন, ‘ম্যালা দিন ধইর্যা বেকার হয়া আছি। কাজ না থাকায় সংসার আর চালাতে পারতেছি না।’
ফেরিঘাটের চায়ের দোকানদার আবদুল বাতেন বলেন, স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকায় এখন লঞ্চ ও ফেরির অল্প কিছু যাত্রী পার হতে আসেন। এতে তাঁর মতো ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা একেবারেই কমে গেছে। স্পিডবোট চালু থাকা অবস্থায় প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার বেচাকেনা হতো। এখন বিক্রি হয় ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার।
বিআইডব্লিউটিএ নগরবাড়ী-কাজীরহাট কার্যালয়ের বন্দর কর্মকর্তা আবদুল ওয়াকিল বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ আছে। ইতিমধ্যে আমরা মালিকপক্ষকে এ ব্যাপারে চিঠি দিয়েছি; কিন্তু তাদের কোনো সাড়া পাইনি। তাদের রুট পারমিট বাতিল করা হয়েছে। এখন এই নৌপথে স্পিডবোট চালানোতে আগ্রহী অন্য মালিকদের চিঠি দেওয়া হবে। অনুমোদন সাপেক্ষে দ্রুতই স্পিডবোট চলাচল শুরু হবে।’