শরীয়তপুরের জাজিরার কাজিরহাটে দা-চাপাতি তৈরি করছেন নির্মল মণ্ডল
শরীয়তপুরের জাজিরার কাজিরহাটে দা-চাপাতি তৈরি করছেন নির্মল মণ্ডল

দা-কাস্তে-ছুরি-চাপাতি তৈরি করে জীবন কাটছে তাঁদের

নির্মল মণ্ডলের বয়স ৬০ বছর। এর মধ্যে ৪০ বছরই কাটিয়েছেন তপ্ত আগুনে লোহা পুড়িয়ে তা দিয়ে দা-কাস্তে-ছুরি-চাপাতিসহ নানা সামগ্রী বানিয়ে। ঈদুল আজহা এলেই তাঁর ব্যস্ততা বেড়ে যায়। বাড়তি আয়ের জন্য সারা বছর এ সময়টার জন্য অপেক্ষা করেন।

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বড়কৃষ্ণনগর এলাকার বাসিন্দা নির্মল মণ্ডল উপজেলার ডুবিসাহেবর এলাকার কাজিরহাটে দা-কাস্তে তৈরির দোকান চালান। ঈদুল আজহার সময় পশু কোরবানি করার জন্য এলাকায় নতুন দা ও চাপাতির প্রয়োজন হয়। তখনই মানুষ নির্মলদের দোকানে ভিড় করেন। মানুষের চাহিদা অনুযায়ী ওই সব সামগ্রী তৈরি করে দিতে রাত–দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন নির্মলসহ কাজিরহাটের অন্তত ৫০ জন কর্মকার।

স্থানীয় কামারদের সঙ্গে কথা বলে যায়, শরীয়তপুর জেলার সবচেয়ে বড় কৃষিপণ্য বিক্রির হাট জাজিরার কাজিরহাট। সেখানে কোরবানির সময় পশুর হাটও বসে। শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকার মানুষ কাজিরহাটে আসেন বিভিন্ন পণ্য ও কোরবানির পশু কেনার জন্য।

ঈদুল আজহার দুই মাস আগে থেকে কর্মকারেরা দা-চাপাতি ও আনুষঙ্গিক সামগ্রী তৈরি করা শুরু করেন। এসব সামগ্রী তৈরির ২০টি দোকান রয়েছে কাজিরহাটে। লোহা দিয়ে তৈরি প্রতি কেজি দা-চাপাতি সাড়ে ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। ঈদুল আজহার দুই সপ্তাহ আগে থেকে দোকানগুলোতে এসব সামগ্রী বিক্রি শুরু হয়। একেকটি দোকানে প্রতিদিন অর্ধলক্ষ টাকার পণ্যসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে।

নির্মল মণ্ডল বলেন, ‘আমি কৃষক পরিবারের সন্তান। অভাবের সংসার হওয়ায় কর্মকারের কাজ শুরু করি। ৪০ বছর ধরে দিন-রাত এক করে আগুনে লোহা পুড়ে যাচ্ছি। বছরের যে সময়ে কোরবানির ঈদ হয়, তার দুই মাস আগে থেকে আমাদের ব্যস্ততা শুরু হয়। এ ছাড়া ধান, পাট ও রবিশস্য মৌসুমে কাস্তে, কোদাল, লাঙল, কুড়াল তৈরির কাজ করি। এ দোকানের আয় দিয়ে সন্তানদের বিয়ে দিয়েছি, সংসার চালাচ্ছি।’

ওই বাজারের আরেক ব্যবসায়ী গোবিন্দ বালার বয়স ৫৫ বছর। কিশোর বয়স থেকে কর্মকার পেশায় আছেন। ১৫ বছর ধরে কাজিরহাট বাজারে কর্মকারের দোকান চালান। গোবিন্দ বালা বলেন, তাঁর বাড়ি মাদারীপুরের মোস্তফাপুর এলাকায়। ২৫ বছর পর্যন্ত এলাকায় কর্মকারের দোকান চালিয়েছেন। কাজিরহাটে লোহার তৈরি এসব সামগ্রীর চাহিদা ভালো থাকায় এখানে ১৫ বছর আগে দোকান দেন। ঈদুল আজহার সময় আয় একটু ভালো হয়।

কাজে ব্যস্ত কর্মকার গোবিন্দ বালা

নড়িয়া উপজেলার ডগ্রি বাজারের ব্যবসায়ী লোকমান হাওলাদার কাজিরহাট থেকে লোহার তৈরি দা-চাপাতি পাইকারি এনে বিক্রি করেন। তিনি বলেন, কাজিরহাটের দোকানের ব্যবসায়ীরা খুচরার পাশাপাশি কিছু পণ্য পাইকারিও বিক্রি করেন। তাঁদের তৈরি সামগ্রীর গুণগত মান ভালো হওয়ায় এলাকায় চাহিদা রয়েছে।

কাজিরহাট বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক বলেন, জেলার সবচেয়ে বড় হাট কাজিরহাট। হাটে ২০টি দোকানে লোহার তৈরি সামগ্রী তৈরি করে তা বিক্রি করা হয়। এখানে বেশ কিছু ব্যবসায়ী আছেন, যাঁরা তিন-চার দশক ধরে এ ব্যবসার সঙ্গে আছেন।