নরসিংদীতে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাদের মিছিলে দুর্বৃত্তের ছোড়া গুলিতে দুজন নিহত ব্যক্তির ঘটনায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘খুনিদের পক্ষ নিয়েছেন’, এমন অভিযোগ তুলেছে নিহত ছাদিকুর রহমানের পরিবার। আজ সোমবার দুপুরে শহরের উপজেলা মোড়ের প্রেসক্লাব মিলনায়তনে পরিবারের সদস্যদের পাশে বসিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন ছাদিকুরের বড় ভাই ও মামলার বাদী মো. আলতাফ হোসেন।
এর আগে গত ২৫ মে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শহরের জেলখানা মোড়ে বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে ঢোকার পথে দুর্বৃত্তের ছোড়া গুলিতে বিদ্ধ হন জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ছাদিকুর রহমান ও তাঁর কর্মী আশরাফুল হক (২২)। রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথেই ছাদিকুর রহমানের মৃত্যু হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন সকালে আশরাফুল হকও মারা যান। এ ঘটনায় করা মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও তাঁর স্ত্রী শিরিন সুলতানাসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৩৫-৪০ জনকে আসামি করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে মো. আলতাফ হোসেন বলেন, অস্ত্র ব্যবসায়ী, ছিনতাই ও হত্যা মামলার আসামিদের নিয়ে গত ২৬ জানুয়ারি কমিটি গঠনের পর জেলা ছাত্রদলের ভেতরে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সৃষ্টি হয়। এর ফলে মানববন্ধন ও বিক্ষোভসহ নানা আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছিল পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। এর জের ধরেই বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও তাঁর স্ত্রী শিরিন সুলতানার নির্দেশে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নাহিদসহ অন্য আসামিরা গুলি করে ছাদিকুর রহমান ও আশরাফুল হককে হত্যা করে। এই ক্ষোভেই খায়রুল কবির খোকনের বাড়িতে (জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়) হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘একজন কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে যৌক্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করে ও বিরোধ নিরসনে দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা না নিয়ে তিনি হত্যাকাণ্ডের মতো জঘন্য পথ বেছে নিয়েছেন। তাই জোড়া খুনের ঘটনার খলনায়ক খায়রুল কবির খোকনসহ সব আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি আমাদের।’
মো. আলতাফ হোসেন আরও বলেন, খায়রুল কবির খোকনসহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় হত্যা মামলা হওয়ার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিহত ছাত্রদল নেতাদের পক্ষে কোনো প্রকার শোক জানিয়ে বিবৃতি দেননি। উল্টো তিনি মামলার আসামি খায়রুল কবির খোকনের পক্ষ নিয়ে হত্যা মামলাকে মিথ্যা আখ্যা দিয়ে পুলিশ ও সরকারি দলের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছেন। বিএনপি মহাসচিবের কাছে নিহত ছাত্রদল নেতার চাইতে খুনিরা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তাই তিনি প্রকৃত খুনিদের আড়াল করতে চাইছেন।
১ জুন বিএনপির সহ–দপ্তর সম্পাদক মো. তাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সারা দেশের মতো নরসিংদী শহর এখন সরকারি সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য। সেখানে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর চলছে সরকারের ছত্রছায়ায় নজিরবিহীন জুলুম। শুধু তা–ই নয়, সরকারের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরা বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর নিরবচ্ছিন্নভাবে সহিংস হামলা চালিয়ে এক রক্তাক্ত নগরীতে পরিণত করেছে। আতঙ্কের শহরের নাম এখন নরসিংদী। এ ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসন রহস্যজনকভাবে নির্বিকার থাকছে। ইতিমধ্যে সুপরিকল্পিতভাবে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন এবং তার স্ত্রী বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে এক অবরুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। তাদের নরসিংদীর বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে আওয়ামী দুষ্কৃতকারীরা।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশ্যে মো. আলতাফ হোসেন বলেন, ‘ছাদিকুর রহমান ছিলেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা। দলেরই বড় নেতারা মিলে তাঁকে খুন করলেন, অথচ আপনি তাঁদের বহিষ্কার ও বিচারের দাবি না করে উল্টো তাঁদের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন। আপনার কাছে আমাদের জোর দাবি, মামলার আসামিদের দল থেকে বহিষ্কার করে আইনের আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। আপনার এই অবস্থান লজ্জাজনক ও রহস্যজনক। খুন হওয়া দুজনের পক্ষ না নিয়ে আপনি হত্যাকারীদের সহযোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে মো. আলতাফ হোসেনের পাশে ছিলেন নিহত ছাদিকুর রহমানের মা সাহেরা বেগম, বড়ভাই মো. ফারুক মিয়া, ছোট ভাই মো. খবির মিয়া, বড় বোন সেলিনা আক্তার এবং দুই ভাবী রহিমা বেগম ও কণা বেগম। এ সময় ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাদের মধ্যে মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া, মাইদুল মিহাল ও ফাহিম ভূঁইয়া ওরফে রাজ সামনের সারিতে ছিলেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা কমিটির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেন এই প্রতিবেদক। তবে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। হোয়াটসঅ্যাপে কল দিলেও তিনি ধরেননি।
মামলার বিষয়ে নরসিংদী মডেল থানার উপপরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, জোড়া খুনের ঘটনায় পুলিশ এ পর্যন্ত এজাহারভুক্ত সাতজনসহ আট আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।