বাছিরন বেগম
বাছিরন বেগম

ভিটা বিক্রি করে ছেলে শ্বশুরবাড়িতে, বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে মা

‘ভরা দিন (বহুদিন) আগে আমার স্বামী ছয় শতাংশ জমিসহ আমার নামে বাড়িডা লেইখা দিছিল। আমার পুলায় (ছেলে) আমারে না জানাইয়া এই বাড়ির ভিটা বেইচা দিছে। এই বয়সে আমি অহন কোনু যামু। চেয়ারম্যান-মেম্বরদের কাছে বিচার দিছি। তারাও পারতাছে না। তাইলে কি দেশে আইন নাই? বিচার নাই?’—এভাবেই মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে বিলাপ করছেন টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কালমেঘা গ্রামের ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধা বাছিরন বেগম। তাঁর বিলাপের একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

বাছিরন একই গ্রামের সুবহান মার্কেট এলাকার মৃত খবরুদ্দিনের স্ত্রী। বছর দশেক আগে তাঁর স্বামী মারা গেছেন। বাছিরনের অভিযোগ, প্রায় ছয় মাস আগে নিজের বসতভিটার ঘরসহ ছয় শতাংশ জমি গোপনে বিক্রি করেন তাঁর ছেলে মো. বাছেদ মিয়া। সেটি কিনে নেন আবদুল গফুর নামের একজন ক্রেতা। জমিটি উদ্ধার করতে বাছিরন বেগম স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কার্যালয়ের গ্রাম আদালতে মামলা করেন। কিন্তু ওই আদালতেই ভিড়ছেন না ছেলে ও জমিটির ক্রেতা। বাড়িটি রক্ষায় এখন স্থানীয় মাতব্বরদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ওই বৃদ্ধা।

প্রায় ছয় মাস আগে নিজের বসতভিটার ঘরসহ ছয় শতাংশ জমি গোপনে বিক্রি করেন তাঁর ছেলে মো. বাছেদ মিয়া। সেটি কিনে নেন আবদুল গফুর নামের একজন ক্রেতা। জমিটি উদ্ধার করতে বাছিরন বেগম স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কার্যালয়ের গ্রাম আদালতে মামলা করেন। কিন্তু ওই আদালতেই ভিড়ছেন না ছেলে ও জমিটির ক্রেতা। বাড়িটি রক্ষায় এখন স্থানীয় মাতব্বরদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ওই বৃদ্ধা।

বাছিরন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ছয় মাস আগে গোপনে বাছিরনের মালিকানাধীন ছয় শতাংশ জমি গফুরের কাছে বিক্রি করেন ছেলে বাছেদ মিয়া। স্থানীয় লোকজনের দাবি, গফুরের কাজই হলো বিরোধপূর্ণ জমি কিনে নিজের দখলে নেওয়া। জমি বিক্রির পরপরই ছেলে বাছেদ মিয়া স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পাশের গ্রামে নিজের শ্বশুরবাড়িতে চলে গেছেন। এদিকে জমির ক্রেতা গফুর বাড়িটি ছেড়ে দিতে বাছিরনকে বারবার চাপ দিচ্ছেন।

গ্রাম আদালত সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত বাছেদকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য পরপর তিনটি নোটিশ দেওয়া হয়। দ্বিতীয় নোটিশে বাছেদ ইউনিয়ন পরিষদে হাজির হয়ে মায়ের নামের জমি বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে জমিটির ক্রেতা গফুর মিয়াকে নিয়ে মীমাংসা করতে তিনি আর গ্রাম আদালতে উপস্থিত হননি। সর্বশেষ গ্রাম আদালত বৃদ্ধা বাছিরনের পক্ষে একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন।

ওটা আমার বাপের বাড়ি। জন্ম থেকেই ওই বাড়িতেই ছিলাম। বাপের সন্তান হিসেবে ওই বাড়িতে আমার জমি আছে। ওই জমি আমি বিক্রি করে দিয়েছি। আমি তো মাকে বের করে দেইনি।
বাছেদ মিয়া, বাছিরনের ছেলে

অভিযোগের বিষয়ে বাছেদ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওটা আমার বাপের বাড়ি। জন্ম থেকেই ওই বাড়িতেই ছিলাম। বাপের সন্তান হিসেবে ওই বাড়িতে আমার জমি আছে। ওই জমি আমি বিক্রি করে দিয়েছি। আমি তো মাকে বের করে দেইনি।’

অন্যদিকে জমিটির ক্রেতা আবদুল গফুর বলেন, ‘আমি জানি ওই বাড়ি বাছেদের। সে ওই বাড়ি আমার কাছে বিক্রি করে শ্বশুরবাড়ি চলে গেছে। এখন আমাকে টাকা ফেরত দিলেই ওই বাড়িতে আমার কোনো দাবি থাকবে না।’

বিষয়টি মীমাংসার জন্য চেষ্টা করেছেন বলে জানান বহুরিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও স্থানীয় মাতব্বর মোশারফ খান। তিনি বলেন, ‘ওই বৃদ্ধার ছেলে বাছেদ ও জমিটি ক্রয়কারী গফুর আমাদের কারও কথা শোনে না।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি আজ আমার চোখে পড়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সখীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রভাষ কুমার বসু

বহুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওই নারীর আহাজারির ভিডিওটি এখন ভাইরাল। আমিও একাধিকবার বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেছি। আমরা অবাধ্য সন্তান বাছেদ ও জমি ক্রয়কারী গফুরের শাস্তি দাবি করছি।’

একই কথা জানান ইউপি চেয়ারম্যান সরকার নূরে আলম। তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি সত্যিই দুঃখজনক। জমিটুকুর মালিক বৃদ্ধা বাছিরন। গ্রাম আদালতে বাছিরনের পক্ষেই রায় হয়েছে। তাঁর ছেলে ও বাড়ি ক্রয়কারী একরোখা প্রকৃতির মানুষ। সমাজের কাউকে তাঁরা মানতে চান না।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সখীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রভাষ কুমার বসু মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি আজ আমার চোখে পড়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’