মাদারীপুর জেলার মানচিত্র
মাদারীপুর জেলার মানচিত্র

মাদারীপুরে দুই শিশুকে হত্যার ঘটনায় মাকে আসামি করে মামলা

মাদারীপুরে দুই শিশুকে হত্যা ঘটনায় মা তাহমিনা তাবাচ্ছুমকে (২৬) একমাত্র আসামি করে মামলা হয়েছে। আজ বৃহস্পবিবার সকালে নিহত দুই শিশুর চাচা আরমান খান বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় মামলাটি করেন।

এ ঘটনায় আটক তাহমিনাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ বেলা তিনটার দিকে মাদারীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করা হলে আদালতের বিচারক তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এদিকে বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে চাচা আরমান খানের কাছে ওই দুই শিশুর লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

এর আগে গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মাদারীপুর শহরের সবুজবাগ এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের মালিকাধীর ভবনের নিচতলার একটি ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে শিশু দুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত ওই দুই শিশুর নাম জান্নাতুল ফেরদাউস ও মেহেরাজ খান। এর মধ্যে মেহেরাজের বয়স ১ বছর ও জান্নাতুলের বয়স ২ বছর ৮ মাস। এ সময় নিহত দুই শিশুর মা তাহমিনা তাবাচ্ছুমকে ওই ফ্ল্যাট থেকে আটক করে পুলিশ।

তাহমিনা তাবাচ্ছুম শরীয়তপুর সদর উপজেলার পশ্চিম সারেঙ্গা এলাকার সৌদিপ্রবাসী হালিম খানের স্ত্রী এবং একই উপজেলার টাউন চিকনদী এলাকার তারা মিয়া সরদারের মেয়ে। তারা মিয়া কাজের সুবিধার্থে মাদারীপুর শহরের সবুজবাগ এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন। তাহমিনা মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় কয়েক মাস ধরে তিনি দুই সন্তান নিয়ে তাঁর বাবার বাড়িতেই থাকতেন।

পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা যায়, গতকাল দুপুরে তাহমিনা তাঁর দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ করে দেন। পরে তাহমিনার মা নারগীস বেগম একাধিকবার ডাকাডাকি করলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হলে নারগীস তাঁর ছোট ছেলে সোহেল সরদারকে বিষয়টি জানান। পরে সোহেল শরীয়তপুর থেকে মাদারীপুরে পৌঁছান বেলা সাড়ে তিনটায়। সোহেল অনেক চেষ্টা করেও তাঁর বোন তাহমিনার ফ্ল্যাটে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হন। পরে সোহেল পুলিশের জরুরি সেবা ৯৯৯–এ কল করে বিষয়টি পুলিশকে জানান। পরে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মাদারীপুর সদর মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। পরে ওই ঘরের বিছানা থেকে তাহমিনার দুই শিশুকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় ওই ঘরের মধ্যেই অবস্থান করছিলেন তাহমিনা। এ ঘটনায় তাঁকে অভিযুক্ত করে সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন নিহত শিশু দুটির চাচা আরমান খান।

মামলার বাদী আরমান খানের দাবি, তাঁর ভাই ও শিশু দুটির বাবা বিদেশে থাকেন। তাঁর ভাতিজা ও ভাতিজিকে গলা টিপে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। তিনি এ ঘটনায় শিশু দুটির মায়ের বিচার দাবি করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মাদারীপুর সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক শুভঙ্কর বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, নিহত ওই দুই শিশুর লাশ ময়নাতদন্ত শেষে মামলার বাদী নিহত দুই শিশুর চাচার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মাকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এইচ এম সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, শিশু দুটিকে হত্যায় অভিযুক্ত মা সুস্থ নন, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম কথা বলেন, এলোমেলোভাবে কথা বলতে থাকেন। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।