টাকা নেওয়ার পরও ভোট না দেওয়ার অভিযোগ তুলে বরগুনার জেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত হয়ে এক ইউপি সদস্যকে মারধর করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে আমতলী উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের লাউপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মারধরের শিকার ওই ইউপি সদস্য আটজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন।
হামলায় আহত ওই ইউপি সদস্যের নাম নুরজাহান বেগম। তিনি উপজেলার সোনাকাটা ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য। তিনি জানিয়েছেন, হামলায় তিনি ছাড়াও তাঁর স্বামীসহ তিনজন জেলে আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় বিচারের দাবিতে ইউনিয়ন পরিষদের সব কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন চেয়ারম্যানসহ অন্য সদস্যরা।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদ্য সমাপ্ত জেলা পরিষদ নির্বাচনে বরগুনা সদর, আমতলী ও তালতলী সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচন করেছিলেন দেলোয়ারা হামিদ। নির্বাচনে উপজেলার ৯৪ জনপ্রতিনিধি ভোট দেন। এর মধ্যে তিনি পান ১২ ভোট। এতে দেলোয়ারা হামিদ সন্দেহ করেন নুরজাহান বেগম তাঁকে ভোট দেননি। গতকাল বিকেলে ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জেলেদের মধ্যে চাল বিতরণ করা হচ্ছিল। সেখানে গিয়ে দেলোয়ারা হামিদের নাতি হৃদয় ফকির ভোট না দেওয়া বিষয়ে ওই ইউপি সদস্যকে নিয়ে কটূক্তি করলে এ নিয়ে কথা–কাটাকাটি হয়। পরে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিষয়টি সমাধান করে দুই পক্ষকে সরিয়ে দেন। এরপর হৃদয় ফকিরের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন লোক এসে ইউপি সদস্য ও তাঁর স্বামীর ওপর হামলা করেন। এ সময় তাঁদের রক্ষার জন্য তিন জেলে ছুটে এলে তাঁদেরও পিটিয়ে আহত করেন তাঁরা।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য হৃদয় ফকিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাঁর দাদি নির্বাচনের প্রার্থী দেলোয়ারা হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনের সময় উপজেলার সব ইউপি সদস্যকে আমি পাঁচ হাজার করে টাকা দিয়েছি। তারা আমাকে ভোট দেবে। তারা আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। তোরা চা-পানি খাবি, খা! কিন্তু নির্বাচনের পর আপনারা রেজাল্ট দেখেছেন। আমারে ভোট দেয় নাই। যার সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে, সেই মহিলা ভোট দিয়েছে আমতলীর প্রার্থীকে। ওই মহিলাকে বলা হয়েছে, “ভোট দেবা না, তায় টাকা নেছ কেন।”’
দেলোয়ারা হামিদ আরও বলেন, ‘এমন এক কথা, দুই কথায় তর্ক হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের সমানে বসে। কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে ওই মহিলা হৃদয়কে জুতা নিয়ে মারতে ওঠেন। সেখানে উপস্থিত লোকজন জুতাপেটা ফেরায়। পরে চেয়ারম্যান তাদের সরিয়ে দেন। পরে আবার হৃদয় ওই মহিলার কাছে টাকা ফেরত চায়। সে সময় আবার তর্ক শুরু হয়। তখন হৃদয় মহিলার স্বামীকে সাত-আটটি কিলঘুষি দেয়।’
আহত ইউপি সদস্য নুরজাহান বেগম বলেন, ‘ইউনিয়নে মেম্বারি করার জন্য হৃদয় ফকির আমার কাছে তিন লাখ টাকা দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা দিতে না চাওয়ায় আমিসহ আমার স্বামীর ওপর তারা হামলা করে। আমার গলার চেইন ও হাতের আংটি তারা নিয়ে যায়। আমার স্বামীর পকেট থেকে ১২ হাজার টাকা ও ১টি মোবাইল নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।’
এ বিষয়ে সোনাকাটা ইউপির চেয়ারম্যান ফরাজী মো. ইউনুচ বলেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচনে দেলোয়ারা হামিদকে ভোট না দেওয়ায় তাঁর নাতি হৃদয় ফকির আমার পরিষদের সদস্য নুরজাহানকে নিয়ে কটূক্তি করেন। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি হলে সমাধান করে দিই। আমার অনুপস্থিতিতে ওই প্রার্থী পরিষদে এসে জোর করে নির্বাচন উপলক্ষে সব ইউপি সদস্যকে পাঁচ হাজার টাকা করে দেন। কেউ নিয়েছে, কেউ নেয়নি।’ তিনি জানান, ইউপি সদস্যকে জনসমক্ষে মারধর করার বিচার না হওয়া পর্যন্ত জনসেবা ছাড়া পরিষদের সব কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ইউপি সদস্যের ওপর হামলার ঘটনায় গতকাল রাতে হৃদয় ফকিরকে প্রধান আসামি করে মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।