খুলনায় এক নারী ও দুই তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নাশকতার ষড়যন্ত্র করার জন্য সমবেত হওয়ার অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে। সেই মামলায় গ্রেপ্তারের পর আজ সোমবার দুপুরে তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তার তিনজন হলেন নগরের সোনাডাঙ্গা থানার বয়রা ফারুকীয়া মসজিদ রোড এলাকার আনিছা সিদ্দিক (৪৫), সাতক্ষীরার শ্যামনগর এলাকার রকিবুল ইসলাম (২৪) ও আশাশুনি এলাকার তামিম ইকবাল (১৯)।
গ্রেপ্তার আনিছা সিদ্দিকের যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ছেলে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে অভিযোগ করেছেন, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজায় সুখরঞ্জন বালির উপস্থিতি নিয়ে তিনি ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। পোস্টটি নানা জায়গা থেকে শেয়ার হয়। এর জের ধরে স্থানীয় যুবলীগ নেতারা তাঁর নানাবাড়িতে গিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছেন। এ সময় তাঁর মা প্রতিবাদ করলে তাঁকে (আনিছা সিদ্দিক) থানায় আটকে রেখে, পরে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এই অভিযোগের বিষয়ে খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াস বলেন, ‘ওই নারীর বাড়ি সোনাডাঙ্গা থানা এলাকায়। আমরা খালিশপুর থানা এলাকার একটা জায়গাতেই অভিযান চালিয়েছি। তিনি সেখানকার সভায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি পুলিশের কাজে বাধা সৃষ্টি করছিলেন। তাঁর ছেলে ফেসবুকে কখন কী পোস্ট দিয়েছেন, এ সম্পর্কে আমাদের একদমই জানা ছিল না।’
খালিশপুর থানার পুলিশ সূত্র জানায়, তাদের কাছে তথ্য ছিল, সারা দেশে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারে ক্ষুব্ধ হয়ে খুলনায় দলটির কিছু সদস্য অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছেন। ওই খবরের ভিত্তিতে রোববার দুপুরে নগরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের হাজি ফয়েজ উদ্দীন সড়কের নগর জামায়াতের নায়েবে আমির সিদ্দিক হেলালের বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানের সময় ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ ধর্মীয় উগ্রপন্থী বই, পত্রিকা, ম্যাগাজিন, রেজিস্ট্রার, লিফলেট, অন্তর্ঘাতমূলক ষড়যন্ত্র করার কাজে ব্যবহৃত তিনটি ল্যাপটপ, পাসপোর্ট, চারটি মুঠোফোনসহ বিভিন্ন মালামাল জব্দ করা হয়। তিনজনকে আটক করা হয়।
খালিশপুর থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস প্রথম আলোকে বলেন, রকিবুল শিবিরের সদস্য, তামিম ৯ নম্বর ওয়ার্ড শিবিরের সভাপতি এবং আনিছা সিদ্দিকা ১৬ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা জামায়াতের রুকন। আনিছা সিদ্দিকা খুলনা নগর জামায়াতের নায়েবে আমীর সিদ্দিক হেলালের বোন। পরে খালিশপুর থানায় এই তিনজনের নামে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম মোস্তফা।
ওসি বলেন, ওই বাড়ির তিনতলা ও নিচতলা মেস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অন্য দুই তলায় মালিক ও ভাড়াটে থাকেন। ওই বাড়িতে সভাকক্ষও আছে। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নাশকতার ষড়যন্ত্র করার জন্য সমবেত হয়েছিলেন। তাঁদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তাঁদের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হবে।
হাজি ফয়েজ উদ্দীন সড়কের যে বাড়ি থেকে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, আজ সোমবার দুপুরে সেই বাড়িতে গিয়ে মূল ফটক তালাবদ্ধ দেখা যায়। বাড়ির কারও সঙ্গে কথা বলাও সম্ভব হয়নি। তবে ওই বাড়ির ঠিক পাশের বাড়ির বাসিন্দা ফজিলা বেগম বলেন, তিনি রোববার দুপুরের দিকে আনিছা সিদ্দিকাকে ওই বাড়িতে যেতে দেখেছেন। এরপর বিকেলের দিকে প্রচুর বইপত্র পুলিশ গাড়িতে তোলে এবং তিনজনকে থানায় নিয়ে যায়।
আনিছা সিদ্দিকার ছেলে স্থানীয় যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। এ বিষয়ে স্থানীয় যুবলীগ নেতা ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ড বিট পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত বলেন, অভিযানের পুরোটা সময় তিনি পুলিশের সঙ্গে ছিলেন। সম্প্রতি সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে গ্রেপ্তার বুয়েট শিক্ষার্থীদের একজন খুলনার জামায়াতের নেতা সিদ্দিক হেলালের ছেলে। পরিবারটির তথ্য জানার জন্য থানায় একটা বার্তা আসে। থানা থেকে একজন এসআই তদন্তের জন্য ফয়েজ উদ্দীন সড়কের সিদ্দিক হেলালের বাড়িতে আসেন। সেখানে সহায়তা করেছেন বলে জানান ইয়াসির।
জামায়াতের নিন্দা
নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানির ঘটনায় খুলনা অঞ্চল জামায়াত তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। সোমবার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ রোববার জামায়াতে ইসলামীর তিন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, সাধারণ জনগণসহ সব রাজবন্দীকে নিঃশর্তভাবে মুক্তি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।