সাতক্ষীরা শহরের প্রাণসায়ের খাল ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করা হয়েছে। এতে ওই খাল দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ রয়েছে
সাতক্ষীরা শহরের প্রাণসায়ের খাল ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করা হয়েছে। এতে ওই খাল দিয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ রয়েছে

আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ মানুষ 

সাতক্ষীরার প্রাণসায়ের খালের দৈর্ঘ্য ১৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে সাতক্ষীরা অংশের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার আবর্জনা ফেলে ভরাট করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা শহরের প্রাণসায়ের খালটি এখন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। শহরের একটি অংশের বাড়ি, দোকানপাট ও বাজারের ময়লা-আবর্জনা ও মৃত জীবজন্তুর মরদেহ খালে ফেলা হচ্ছে। খালের পানি পচে কালো হয়ে দুর্গন্ধ ছাড়াচ্ছে। দুর্গন্ধে খালের দুই ধারের ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের টেকা দায় হয়ে পড়েছে। খালের পূর্ব পাশের সড়ক দিয়ে মানুষের নাকে রুমাল দিয়ে চলাচল করতে হয়। 

স্থানীয় লোকজন জানায়, পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং স্থানীয় লোকজনে অসচেতনতার কারণে খালটি এখন মৃতপ্রায়। স্থানীয় নাগরিক সমাজ খনন এবং ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধের উদ্যোগ নিয়ে খালটি রক্ষার দাবি জানিয়েছে।

সতীশ চন্দ্র মিত্রের যশোর-খুলনার ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৮৫০ সালের দিকে সাতক্ষীরার জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরী নদীপথে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা, শহরের শ্রীবৃদ্ধি ও মরিচ্চাপ নদের সঙ্গে বেতনা নদীর সরাসরি সংযোগ স্থাপনের জন্য ১৪ কিলোমিটার খালটি খনন করেন। ওই সময় খালটির প্রস্থ ছিল ১৫০ ফুট। খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, কলকাতাসহ বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম ছিল এ খাল। এ খালের মাধ্যমে সহজ হয়ে উঠেছিল জেলার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগও। এ ছাড়া খালটি সাতক্ষীরা শহর ও আশপাশের ৪০টি গ্রামের বর্ষা মৌসুমের পানিনিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত হতো। সাতক্ষীরার তৎকালীন জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরীর নাম অনুসারে খালটির নামকরণ করা হয় প্রাণসায়ের খাল। এর মধ্যে শহর অংশের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার আবর্জনা ফেলে ভরাট করা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র আরও জানায়, ১৯৯০ সালের দিকে প্রবল স্রোতে বন্ধ করে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে খালের এল্লারচর ও খেজুরডাঙ্গায় স্লুইসগেট নির্মাণ করে পাউবো। পরবর্তী সময়ে স্লুইসগেট দুটি অকেজো হয়ে গেলে খালের পাশ দিয়ে কেটে সেখান থেকে পানিপ্রবাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পানির প্রবাহ আর আগের জায়গা না আসায় খালটি আস্তে আস্তে মৃত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় খালটি খনন করে আবার সচল করার চেষ্টা করা হয়। ২০২১ সালের জুন মাসে খালটি পুনঃখনন শেষ হলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই শহরের ময়লা-আবর্জনা ফেলায় এটি ভরাট হতে শুরু করে। বর্তমানে এ খালে পানিপ্রবাহ নেই বললেই চলে।

সাতক্ষীরা পাউবোর (বিভাগ-২) নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুর রহমান জানান, খালটি পাউবো খনন করলেও জমির মালিক পৌর কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন। তাদেরই এটি রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা। 

সাতক্ষীরা শহরের বাসিন্দা নাগরিক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ সরকার জানান, ২০২১ সালের জুনে খালটির পুনঃখননকাজ শেষ হয়। বছর পেরোতে না পেরোতেই খালটি আবার ভরাট হয়ে হতে থাকে। খালের দুই মুখে এল্লারচর ও খেজুরডাঙ্গায় বন্ধ থাকায় পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বদ্ধ খালটিতে ফেলা হচ্ছে শহরের আবর্জনা। খালের পচা পানিতে আবর্জনা মিশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। খালপাড় দিয়ে লোকজনকে চলাচল করতে হয় মুখে রুমাল দিয়ে। আর খননকাজের দুই বছর পর থেকে একটি সাতক্ষীরা শহরের সবচেয়ে বড় ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

খালপাড়ের ব্যবসায়ী রাহাত রাজা জানান, খালের দুই পাশের ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্থান হয়েছে খালটি। বদ্ধ খালের পানির সঙ্গে ময়লা-আবর্জনা মিশে পচা পানি থেকে দুর্গন্ধ ছাড়াচ্ছে। লোকজন তাঁদের দোকানে আসতে চান না।   

খালপাড়ের বাসিন্দা সাগর হোসেন বলেন, খালের পচা পানির কারণে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিন ভোরে খালপাড়ের দুই পাশের সড়ক দিয়ে কয়েক শ মানুষ হাঁটাহাঁটি করেন। তাঁদের নাক চেপে ধরে চলাচল করতে হয়। শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এ খালে ময়না-আবর্জনা ফেলে পানি দূষিত করে ফেলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র ফিরোজ হাসান বলেন, মানুষ যাতে খালটিতে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে, সে জন্য বারবার বলা হচ্ছে। তিনি নিজে গিয়ে বড়বাজারে ব্যবসায়ীদের বলে এসেছেন। তারপরও খালে ময়লা ফেলা বন্ধ করতে পারছেন না। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেবেন।