দূষিত বাতাসের নগরের তালিকায় কেন কুমিল্লার নাম

বায়ুদূষণ
ফাইল ছবি

কুমিল্লাকে বলা হতো দিঘি ও পুকুরের শহর। ছিমছাম এ শহরের নির্মল বাতাসে নিশ্বাস নিত নগরবাসী। আবাসিক শহর হিসেবে এ জেলার সুনামও ছিল। তিন বছর আগেও বায়ুদূষণে এ জেলার অবস্থান ছিল কম দূষণের তালিকায়। সময়ের পরিক্রমায় তিলোত্তমা এ নগরীর বাতাসে এখন বিষ। চলতি মাসেই দূষিত বাতাসের নগরের তালিকার শীর্ষে তিনবার কুমিল্লার নাম এসেছে।

পরিবেশবিদদের মতে, কুমিল্লায় অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ, ট্রাক্টরে করে মাটি-ইট সরবরাহ, উন্মুক্তভাবে ভবন নির্মাণ, সড়কে যেখানে-সেখানে মাটি-বালু-ইট-সিমেন্ট ফেলে রাখা, যানবাহনের ধোঁয়া, ইটভাটা ও ঘনবসতি বেশি হওয়া বায়ুদূষণের তালিকার শীর্ষে নাম থাকার বড় কারণ।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বৈশ্বিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ারের তথ্যমতে, ৪ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার আইকিউ স্কোর ছিল ২৬৫ পিপিএম। ৬ ফেব্রুয়ারি ছিল ২৮১ পিপিএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ছিল ২৮৯ পিপিএম। এটি খুব অস্বাস্থ্যকর।

পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান সূচক বলছে, বায়ুমান শূন্য থেকে ৫০ পর্যন্ত ভালো, ৫১ থেকে ১০০ মোটামুটি, ১০১ থেকে ১৫০ সতর্কতামূলক, ১৫১ থেকে ২০০ অস্বাস্থ্যকর, ২০১ থেকে ৩০০ খুব অস্বাস্থ্যকর, ৩০১-এর ওপরে দুর্যোগপূর্ণ ও অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। ২০১৯ সালের জুন মাসে পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান মানমাত্রা মনিটরিং স্টেশনের তথ্যে বলা হয়, দেশের সবচেয়ে কম বায়ুদূষণের জেলা কুমিল্লা।

স্থানীয় পরিবেশবাদীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লায় আছে ১০০ কিলোমিটার ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক। রয়েছে আরও মহাসড়ক। এসব সড়ক দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৩০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। যানবাহনের কালো ধোঁয়া, কুমিল্লা ইপিজেড, কুমিল্লা ও চৌদ্দগ্রাম বিসিক শিল্পনগরীর কারখানা ধোঁয়ার পাশাপাশি আছে জেলার ১৭ উপজেলার ৩৫০টি ইটভাটার ধোঁয়া। গোমতী, কাঁকড়ি, মেঘনা, তিতাস ও ডাকাতিয়া নদী থেকে বালু ও মাটি তোলা হচ্ছে অবাধে। প্রতিনিয়ত ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এসব ভবন নির্মাণে কোনো ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে বাতাসে ছড়াচ্ছে বালু, সিমেন্ট আর ইটের কণা। এ ছাড়া রাতে ট্রাক্টর ও ট্রাকে মাটি বালু আনা-নেওয়ার কারণে সড়কে বালু ও ধূলিকণা পড়ে থাকে।    

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কুমিল্লা অঞ্চলের সভাপতি ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কুমিল্লায় বায়ুদূষণ আগের চেয়ে বেড়েছে। পরিবহন সেক্টরে মালামাল আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সতর্কতা নেই। এখানে ভবন ভাঙতে ও নতুন করে বানাতে দূষণ হচ্ছে। নগরের তরল বর্জ্য নালা থেকে তুলে সড়কে ফেলা হচ্ছে। এরপর এগুলো শুকালে ট্রাকে করে নেওয়া হয়। তখন দূষণ হচ্ছে। যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। ইটভাটা তো আছেই। এগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক মোসাব্বের হোসেন মুহাম্মাদ রাজীব বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে দূষণ বাড়ে। এখন কোন স্কেলে কুমিল্লা বায়ুদূষণের শীর্ষে, সেটি খতিয়ে দেখতে হবে। আমরা দেখব। কুমিল্লায় রাতের বেলায় বায়ুদূষণ বাড়ছে। তখন অবাধে ট্রাক্টর ও ট্রাকে করে মাটি, বালু ও ইট আনা-নেওয়া করা হয়। নগরে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে কোনো ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়াই। দুই সপ্তাহ আগে কুমিল্লার আবাসন ব্যবসায়ীদের আমরা চিঠি দিয়েছি। তাঁরা ভবনের নির্মাণকাজ করেন না ঢেকে, নির্মাণসামগ্রী সড়কের ওপর ফেলে রাখেন।’