বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা) এবং বগুড়া-৬ (সদর) আসনে দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপর স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ রোববার সকাল ১০টায় সোনাতলা উপজেলার রানীরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র এবং সদর উপজেলার গোকুল তসলিম উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সকাল ১০টার দিকে বগুড়া-১ আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান সোনাতলা উপজেলার রানীরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে যান। এ সময় তিনি প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নবীন আনোয়ারের নেতৃত্বে কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তাঁরা প্রার্থীর ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করেন।
মোস্তাফিজুর রহমান অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা তাঁর গাড়িও ভাঙচুর করেন। পুলিশের সামনে এই ঘটনা ঘটলেও তারা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছে। সকাল থেকেই নৌকার লোকজন সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার বেশ কিছু কেন্দ্র দখল করে নৌকায় সিল মেরে বাক্সে ভরেছেন।
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, সারা দেশে সুষ্ঠু ভোট হলেও এই আসনে আওয়ামী লীগ ‘সন্ত্রাসীদের’ হাতে ভোটার জিম্মি। যেহেতু তিনি আওয়ামী লীগেরই সমর্থক, তাই ভোট বর্জন করলে দলেরই বদনাম হবে। তাই শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠেই থাকবেন।
এই ঘটনায় প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সামিউল আলম বলেন, ঘটনার পরে সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
এদিকে, বগুড়া-৬ আসনে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান আকন্দ সকাল ১০টার দিকে সদর উপজেলার তসলিম উদ্দিন বালিকা উচ্চবিদ্যালয় পরিদর্শনে যান। সেখানে তিনি জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে তাঁর এজেন্টদের বুথ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ তোলেন। এ নিয়ে আমিনুল ইসলামের সঙ্গে ট্রাকের এজেন্টদের বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে আবদুল মান্নান আকন্দের ওপর স্থানীয় যুবলীগের নেতা-কর্মী চড়াও হয়।
স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমার এজেন্টদের বের করে দিলে সেখানে আমিনুল ইসলামের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে যুবলীগের নেতা-কর্মীরা রাকিবুল ও রকি নামের আমার দুই সমর্থককে মারপিট করেন। আওয়ামী লীগের লোকজন কিছু ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের আসতেও দিচ্ছে না।’
আরও পড়ুনঃ
কক্ষে ভোটার নেই, বাইরে লাইন দেখানোর চেষ্টা ছাত্রলীগের
নৌকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর লাঙ্গলের প্রার্থীর ভোট বর্জন
যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম দাবি করেন, আবদুল মান্নান তাঁকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করলে নেতা-কর্মীরা তাঁর ওপর চড়াও হন। তবে তাঁকে কোনো মারধর করা হয়নি।
এ বিষয়ে বগুড়া পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমানের ওপর নৌকার সমর্থকেরা হামলা করেছে। ইতিমধ্যে হামলাকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে। আর বগুড়া-৬–এর স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মান্নান আকন্দের সঙ্গে যুবলীগ কর্মীদের বাগ্বিতণ্ডা হয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, বগুড়ায় শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে। তবে দুটি আসনে দুটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। বগুড়া-১ আসনে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। বগুড়া-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান যে দুটি কেন্দ্র দখলের অভিযোগ করেছেন, তাঁরা এর সত্যতা পাননি।