যশোরে এক তরুণকে হত্যার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে অভিযুক্তের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। রোববার সকালে তোলা
যশোরে এক তরুণকে হত্যার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে অভিযুক্তের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। রোববার সকালে তোলা

যশোরে তরুণকে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্তের বাড়িতে আগুন, দুজন আটক

যশোরে ছুরিকাঘাত করে টগর হোসেন (২২) নামের এক তরুণকে হত্যার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আগুনে অভিযুক্ত ব্যক্তির বাড়িসহ আশপাশের ছয়টি ঝুপড়ি ঘর পুড়ে গেছে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে শহরের বারান্দীপাড়ার মাঠপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।

নিহত টগর শহরের বারান্দীপাড়া মেঠোপুকুরপাড় এলাকার খন্দকার আবু তাহেরের ছেলে। পেশায় তিনি একজন রিকশাচালক ছিলেন। ১০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে বারান্দীপাড়ার মাঠপাড়া এলাকায় তাঁকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর জখম করেন স্থানীয় আয়ানসহ কয়েকজন। ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শুক্রবার দুপুরে টগরের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় টগরের বাবা খন্দকার আবু তাহের বাদী হয়ে আয়ান ও তাঁর মা ফাতেমা বেগমকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ঘটনার পরপরই আয়ানের মাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টগর হত্যা মামলার আসামি আয়ানের পরিবার স্থানীয় তারেক হাসানের একটি ঘরে ভাড়া থাকেন। গতকাল ঢাকা থেকে টগরের লাশ বাড়িতে পৌঁছালে টগরের বন্ধু ও স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। লাশ দাফনের পর রাত ১২টার দিকে বিক্ষুব্ধ লোকজন টগর হত্যা মামলার আসামি আয়ানের থাকার ঘরে আগুন দেন। মুহূর্তেই আগুন আশপাশের ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস এক ঘণ্টা চেষ্টা চালালেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। আগুনে আশপাশের মোট ছয়টি ঘর পুরো ভস্মীভূত হয়ে যায়।

যশোর ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক মামুনুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, গতকাল দিবাগত রাত ১২টার দিকে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পাঠানো হয়। তাঁরা এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়েও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি। আগুন দেওয়া ছয়টি ঘর পুরোপুরি পুড়ে যায়। তবে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।

আগুন দেওয়ার ঘটনায় রাতেই দুজনকে আটক করে পুলিশ। তাঁরা হলেন শহরের বারান্দীপাড়া এলাকার বাসিন্দা বড় সোহেল (২৪) ও ছোট সোহেল (২২)। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও যশোর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক লিটন চন্দ্র দাস প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, নিহত টগর, অভিযুক্ত আয়ানসহ কয়েকজন একসঙ্গে চলাফেরা করতেন। উভয়ে পরস্পরের বন্ধু। টগরের সঙ্গে আয়ানের মনোমালিন্যের জেরে টগরকে ছুরি মেরে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার জেরে আয়ানের ঘরে অগ্নিসংযোগ করেন টগরের অন্য বন্ধুরা। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, ১০ ফেব্রুয়ারি রাত দেড়টার দিকে রিকশা চালিয়ে বারান্দীপাড়ার মাঠপাড়া এলাকা দিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন টগর। তখন অভিযুক্ত আয়ানসহ কয়েকজন টগরের পেট, গলা ও পায়ে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর জখম করেন। অভিযুক্ত আয়ানের মা ফাতেমা বেগমসহ কয়েকজন মুমূর্ষু অবস্থায় টগরকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। টগরকে জরুরি বিভাগে রেখে দ্রুত সটকে পড়ার চেষ্টা করেন ফাতেমা। পুলিশ হাসপাতাল থেকে ফাতেমাকে আটক করে। এদিকে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য টগরকে ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার দুপুরে টগর মারা যান।