মির্জাগঞ্জের পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের কার্যালয়
মির্জাগঞ্জের পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের কার্যালয়

২২ লাখ টাকা নিয়ে উধাও পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের মাঠকর্মী

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) ৪২ গ্রাহকের ২২ লাখ টাকা নিয়ে এক মাঠকর্মী উধাও হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা এ অভিযোগ করেছেন।

অভিযুক্ত ওই মাঠকর্মীর নাম গৌতম কুমার রায়। ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা অভিযোগ করেন, মির্জাগঞ্জ পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের মাঠকর্মী গৌতম কুমার রায়ের কাছে তাঁরা ঋণের কিস্তি, সঞ্চয় ও মুনাফার আশায় বিভিন্ন মেয়াদে টাকা জমা দেন। কিন্তু এসব টাকা পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের হিসাব নম্বরে জমা না দিয়ে তিনি আত্মসাৎ করেছেন। ৪২ জন সদস্যের ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে গৌতম এখন উধাও।

মির্জাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম কাকড়াবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা আকলিমা বেগম (৩৮)। তিনি পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের মির্জাগঞ্জ শাখার সদস্য। তিনি ডিপিএস হিসেবে ৬১ হাজার ৫০০ টাকা জমা করেছেন। সাত মাস ধরে কার্যালয়ে ঘুরছেন, মুনাফা পাচ্ছেন না, জমা টাকাও ফেরত পাচ্ছেন না।

দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া গ্রামের নারী শেমালা বেগম। তিনি তিনটি ডিপিএসের আওতায় ১ লাখ ৭৭ হাজার টাকা জমা করেছেন। জমার টাকা ফেরত না পেয়ে এখন পড়েছেন বিপাকে। পশ্চিম সুবিদখালী গ্রামের নাসির হাওলাদার জমা করেছেন ৩০ হাজার টাকা। একই গ্রামের শওকত হোসেনের জমার পরিমাণ ১১ হাজার টাকা।

মির্জাগঞ্জ পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দরিদ্র ও অসহায় জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করার মাধ্যমে উপজেলায় ৬টি ইউনিয়নে মোট ৬৮টি সমিতি গঠন করা হয়। এতে মোট গ্রাহকের সংখ্যা ২ হাজার ৩৪৯ জন। মাঠকর্মী গৌতম কুমার রায় আটটি সমিতির শতাধিক গ্রাহকের ঋণের কিস্তি, সঞ্চয়, ডিপিএসের অর্থ সংগ্রহ করতেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চয় ও ঋণের কিস্তি গ্রাহকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে জমা বইতে তুলেছেন। কিন্তু কার্যালয়ে জমা দেননি। এভাবে ২২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় গত ডিসেম্বরে গৌতম মির্জাগঞ্জ থেকে পালিয়ে যান। ওই ঘটনার সময় মির্জাগঞ্জ শাখার প্রধান ছিলেন মো. হানিফ।

ভুক্তভোগী এক গ্রাহকের হিসাবের বই

এ ঘটনায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে মো. হানিফকে মাগুরার শ্রীপুরে পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনে বদলি করা হয়েছে। কিন্তু সাত মাসেও ভুক্তভোগী সদস্যরা জমা টাকা ফেরত পাননি। তাঁরা প্রতিদিন কার্যালয়ের সামনে ভিড় করছেন। এ বিষয়ে মো. হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, মাঠকর্মী গৌতম গ্রাহকদের ২২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন। তিনি গ্রাহকদের টাকা সঠিকভাবে জমা দেননি। বিষয়টি তিনি টের পাননি। এ ব্যাপারে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। তাঁকেও (হানিফ) শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে।

এ বিষয়ে জানার জন্য অভিযুক্ত মাঠকর্মী গৌতমের মুঠোফোনে বারবার ফোন করা হলেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। গত মঙ্গলবার মির্জাগঞ্জ পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা জমা বই নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। সেখানে আকলিমা বেগম, শেমালা বেগম, ইউসুফ আলী, মোখলেসুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের দাবি, জমা করা অর্থ তাঁরা ফেরত চান। এ জন্য সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘গৌতম শুধু গ্রাহকদের টাকা নিয়েই পালিয়ে যাননি। আমাকে জামিনদার বানিয়ে তিনি ব্যাংক থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। এখন আমাকে সেই ঋণের টাকা দিতে হচ্ছে। গৌতম একা নন, তাঁর সঙ্গে কর্মকর্তা মো. হানিফও জড়িত। না হলে দিনের পর দিন কীভাবে গ্রাহকদের ঠকিয়ে এত টাকা নিয়ে গৌতম পালিয়ে যান।’

মির্জাগঞ্জের পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে তৎকালীন দারিদ্র্য বিমোচন কর্মকর্তা মো. হানিফ ও মাঠকর্মী গৌতমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে। ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা জমাকৃত অর্থ যাতে ফেরত পান, সে ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।