‘গুমের শিকার হয়ে আয়নাঘরে বন্দী’ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে সিলেটে মানববন্ধন হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট নগরের চৌহাট্টা এলাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলাবাসীর ব্যানারে এ কর্মসূচি হয়েছে। এ দুই উপজেলা নিয়ে সিলেট-২ সংসদীয় আসন গঠিত। এখানকার সংসদ সদস্য ছিলেন ইলিয়াস আলী।
সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জালাল উদ্দিন এই মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন। বিশ্বনাথ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব আশিকুর রহমানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ইলিয়াস আলী ছিলেন ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। স্বৈরাচারী হাসিনা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে তাঁকে অপহরণ করে গুম করেছিল। অবিলম্বে জননেতা ইলিয়াস আলীকে ফেরত চান তাঁরা। অন্যথায় রাজপথে কঠিন আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি ফখরুল ইসলাম, ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফখর উদ্দিন, সিলেট প্রেস মালিক সমিতির সভাপতি আমিনুল হক, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব শাকিল মোর্শেদ, বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল মতিন, জেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক অর্জুন ঘোষ, ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল হাকিম, ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রায়হান আহমদ প্রমুখ।
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার বনানী থেকে গাড়িচালক আনসার আলীসহ নিখোঁজ হন ইলিয়াস আলী। বিএনপির অভিযোগ, তাঁকে আওয়ামী লীগ সরকারের লোকজন গুম করে রেখেছে। ওই সময় ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে টানা এক সপ্তাহ হরতাল পালিত হয় বিশ্বনাথ উপজেলায়, যে হরতালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ছাত্রদল ও যুবদলের তিন কর্মী নিহত হন।
সিলেট বিএনপির একাধিক নেতা জানান, ২০১১ সালের মধ্যবর্তী সময় ভারতের টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বন্ধের দাবিতে সিলেটে জোরালো আন্দোলন দানা বাঁধে ইলিয়াস আলীর নেতৃত্বে। আঞ্চলিক ইস্যুতে সেই আন্দোলন অতীতে কমই দেখা গেছে। সিলেট-২ আসনে টানা তিনবার নির্বাচন করে ইলিয়াস আলী বিজয়ী হন দুবার।
ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ‘গুম’ হওয়া ব্যক্তিরা একের পর এক বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। গতকাল বুধবার প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কথিত আয়নাঘর থেকে মুক্তি পেয়েছেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) নেতা মাইকেল চাকমা।
এর আগে আট বছর পর বন্দিশালা থেকে মঙ্গলবার ভোরে মুক্ত হয়েছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (বরখাস্ত) আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আহমাদ বিন কাসেম (আরমান)। সোমবার রাতে সেনাবাহিনীর সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন সময় গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনেরা ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার কচুক্ষেতে সমবেত হয়ে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) ‘আয়নাঘরের বন্দীদের’ মুক্তির দাবি জানান। এরপরই তাঁরা মুক্ত হয়ে ফিরে আসেন।
এ অবস্থায় কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবর রটে, বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য ‘নিখোঁজ’ এম ইলিয়াস আলীও ফিরবেন। সিলেটের বিএনপি নেতারাও সেই আশা করছেন।