রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে দৌলতদিয়ায় এক যৌনকর্মীকে (২৫) হত্যার অভিযোগে তিন তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার ওই তিনজন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তার তিনজন পরস্পরের বন্ধু। টাকা হাতিয়ে নিতে তাঁরা ওই যৌনকর্মীকে খুন করে পালিয়ে যান।
৭ অক্টোবর সকালে পুলিশ দৌলতদিয়া যৌনপল্লি থেকে ওই তরুণীর লাশ উদ্ধার করে। ওই ঘটনায় ভাড়া বাসার মালিক দবির সরদার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় মামলা করেন। গ্রেপ্তার তিনজন হলেন টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার পাইকশা মাঝাইল গ্রামের আবদুল কাদের (২৪), একই গ্রামের মুরাদ শেখ (২২) ও নিচুনপুর গ্রামের রাসেল শেখ (২০)। গতকাল বিকেল থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত রাজবাড়ীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাঁরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে কাদের, রাসেল ও মুরাদ জানান, অনেক আগে থেকে তাঁদের আরেক বন্ধুর সঙ্গে ওই তরুণীর সখ্য ছিল। সেই সুবাদে মাঝেমধ্যে তাঁরা যৌনপল্লিতে যেতেন। এক বন্ধুর কাছ থেকে কাদের ১৫ হাজার টাকা ধার করে যৌনপল্লিতে এসে খরচ করেন। কাদের, রাসেল ও মুরাদ সেই টাকা ওই তরুণীর কাছ থেকে আদায়ের পরিকল্পনা করেন। ৬ অক্টোবর টাঙ্গাইলের ধুপুরিয়া বাজার থেকে বড় রশি ও ব্লেড কিনে রশি তিন টুকরা করে রাতেই যৌনপল্লিতে আসেন তাঁরা তিনজন। দিবাগত রাত একটার দিকে ওই যৌনকর্মীর কক্ষে গিয়ে তিন বন্ধু মিলে কোল্ড ড্রিংকস ও নুডলস খান। আর রাসেল পান করেন মদ। খাওয়া শেষে তিন বন্ধু তরুণীর নাচ দেখতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁরা ক্লান্ত হয়ে পড়েন। রাত দুইটার দিকে কাদের ওই তরুণীর গলা ও মুখ চেপে ধরেন। রাসেল ওড়না দিয়ে তরুণীর দুই পা বাঁধেন। মুরাদ বাঁধেন হাত। এ সময় কাদেরের বাঁ হাতে কামড় দিয়ে রক্তাক্ত করেন ওই তরুণী। পরে মুরাদ গামছা দিয়ে তরুণীর মুখ ও রশি দিয়ে পিছমোড়া করে হাত বাঁধেন। একপর্যায়ে শ্বাসরোধে তরুণীকে হত্যা করা হয়। পরে পাশের কক্ষের ড্রয়ার থেকে ১৪ হাজার ২০০ টাকা, নূপুর ও ব্রেসলেট নিয়ে তাঁরা তিনজন যৌনপল্লি থেকে সটকে পড়েন।
এ ছাড়া গতকাল রাতে রাজবাড়ী পুলিশ সুপারের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনার বিস্তারিত জানানো হয়। নিহত তরুণীর বাড়ি ঢাকা দোহার উপজেলায়। প্রায় পাঁচ মাস যৌনপল্লিতে তিনটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে ছিলেন তিনি। আধুনিক প্রযুক্তির সহযোগিতায় পুলিশ যৌনকর্মী তরুণী হত্যাকাণ্ডে তিনজন জড়িত থাকার প্রমাণ পায়।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) উত্তম কুমার ঘোষের নেতৃত্বে গত রোববার বিকেলে সাভারের বিশমাইল এলাকা থেকে রাসেল ও মুরাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই দিন রাতেই ঢাকার শ্যামপুর থেকে কাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। কাদের ঢাকার শ্যামপুর বাজারের শ্রমিক, মুরাদ সাভার বিশমাইলে অটোরিকশা চালাতেন। আর রাসেল বেকার। মুরাদের স্ত্রীর কাছ থেকে নিহত তরুণীর নূপুর, কাদেরের বোনের কাছ থেকে সিটি গোল্ডের ব্রেসলেট ও কাদেরের কাছ থেকে ১ হাজার ৬৫৫ টাকা উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) উত্তম কুমার ঘোষ বলেন, ৪৮ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার এবং লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করা হয়। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শেষে গতকাল রাতেই আদালত তিন আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।