বগুড়া ও জয়পুরহাট

এখনো আলুর ৫৬ হিমাগার বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা, প্রশাসনের উদ্যোগ নিয়ে অসন্তোষ

প্রশাসনের উদ্যোগে বগুড়া শহরে পাইকারিতে প্রতি কেজি আলু ৩৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে একেকজন ক্রেতা পাঁচ কেজির কম আলু কিনতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। শহরের রাজা বাজার আড়তে
ছবি: সোয়েল রানা

আলু উৎপাদনের এলাকা হিসেবে পরিচিত বগুড়া ও জয়পুরহাটের ৫৬টি হিমাগার থেকে আলু বিক্রি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। এসব হিমাগারেই সিংহভাগ আলু মজুত রয়েছে। কিন্তু পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে আলুর দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর প্রায় এক সপ্তাহ ধরে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু বিক্রি করছেন না।

দু-একটি হিমাগারে সীমিত পরিসরে আলু বিক্রি হলেও তারা সরকারের বেঁধে দেওয়া ২৭ টাকা দরে আলু বিক্রি করছে না। কেজিপ্রতি ৯ টাকা বেশি নিয়ে ৩৬ টাকায় বিক্রি করছেন। এক হাত বদলের পর খুচরা পর্যায়ে এই আলু বিক্রি হচ্ছে কেজি ৪৫ থেকে ৫৫ টাকায়।

হিমাগার পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উৎপাদন মৌসুমে হিমাগারে প্রতি কেজি বিদেশি সাদা জাতের আলুতে (অ্যাসটরিক, গ্র্যানুলা ও কার্ডিনাল) হিমাগার ভাড়াসহ খরচ পড়েছে গড়ে ১৮ টাকা এবং দেশি জাতের লাল আলু প্রতি কেজিতে খরচ পড়েছে ২২ টাকা। এখন হিমাগারে ১ কেজি বিদেশি জাতের আলু ৩৫ টাকা এবং দেশি জাতের আলু ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। পাইকারদের কাছ থেকে হাতবদলের পর বগুড়া শহরের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি সাদা আলু ৪৫ টাকা এবং দেশি লাল আলু ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বগুড়া ও জয়পুরহাটে গত উৎপাদন মৌসুমে ৯৪ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। আলু উৎপাদিত হয়েছে ২১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৮০ মেট্রিক টন। সংরক্ষণ জটিলতায় উৎপাদক পর্যায়ের কৃষকেরা খেত থেকে আলু তোলার পর খুব কম দামে তা বিক্রি করে দেন। এবার ২ জেলার ৫৬টি হিমাগারে ৫ লাখ ৫ হাজার ২৬৮ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করেছেন মজুতদারেরা। তবে সরকার দর নির্ধারণ করে দেওয়ার পর থেকে হিমাগারে আলু বিক্রি বন্ধ করে দেন তাঁরা।

বগুড়ার হিমাদ্রি কোল্ড স্টোরেজ, শাহ সুলতান হিমাগার, মোকামতলা আর অ্যান্ড আর কোল্ড স্টোরেজ, বগুড়া ভান্ডার, জয়পুরহাটের পুনট কোল্ড স্টোরেজ, আরবি স্পেশালাইজড কোল্ড স্টোরেজ, এম ইশরাত লিমিটেড, নর্থপোল কোল্ড স্টোরেজ ও সাউথপোল কোল্ড স্টোরেজে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দর নির্ধারণ করে দেওয়ার পর থেকেই এসব হিমাগারে আলু বিক্রি বন্ধ রয়েছে।

বগুড়ার কিচক এলাকার আলু ব্যবসায়ী নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘৫ হাজার বস্তা আলুতে ৫৫ লাখ টাকা মুনাফা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বেঁধে দেওয়া দরে আলু বিক্রি করলে মুনাফা কম হবে। এ কারণে আলু বিক্রি বন্ধ রেখেছি।’

এদিকে ভোক্তাপর্যায়ে ৩৬ টাকা কেজি দরে বিদেশি জাতের সাদা আলু বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে বগুড়া জেলা প্রশাসন। বৃহত্তর বগুড়া কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে গতকাল শনিবার থেকে পণ্যের পাইকারি মোকাম বগুড়া শহরের রাজাবাজারে ৩৬ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়। তবে এখানে পাঁচ কেজির নিচে আলু নেওয়ার সুযোগ নেই বলে অভিযোগ করেছেন অনেক ক্রেতা। এই উদ্যোগের সুফল থেকে খুচরা ক্রেতারা বঞ্চিত হচ্ছেন।

আবদুর বারি নামের একজন ক্রেতা ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছেন, ৩৬ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির উদ্যোগ শুধুই লোকদেখানো। রাজাবাজারে কোনো খুচরা ক্রেতা বাজার করতে যান না। খুচরা ক্রেতারা বাজার করেন পাশের ফতেহ আলী বাজারে। অথচ ১০০ গজ অদূরে এই বাজারে গতকাল ৪৫ টাকার নিচে কোনো আলু বিক্রি হয়নি। জেলা প্রশাসন তাহলে কার স্বার্থে ৩৬ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে, সেই প্রশ্ন করেন তিনি।

তবে রাজাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং কাঁচামাল ও মসলা জাতীয় পণ্যের আমদানিকারক পরিমল প্রসাদ রাজ বলেছেন, আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসনের ৩৬ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির উদ্যোগে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। প্রথম দিনে পাইকারি ও খুচরা উভয় পর্যায়ের ক্রেতারা এই দামে আলু কিনতে পেরেছেন।