গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের কর্মী–সমর্থকদের হামলায় নিহত স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদারের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আজ বেলা পৌনে ১টায় গোপালগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে তাঁর লাশ হস্তান্তর করে কর্তৃপক্ষ। পরিবারের পক্ষে লাশ বুঝে নেন নিহত দিদারের স্ত্রী রাবেয়া রহমান, শ্বশুর হাবিবুর রহমান, বোন মাফুজা আক্তার, শ্যালক আব্দুর রহমান।
দিদারের শ্বশুর হাবিবুর রহমান মুঠোফোন প্রথম আলোকে বলেন, নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দিদারের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে বাদ মাগরিব জুরাইন কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।
হাবিবুর রহমান বলেন, ‘দিদার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের তালিকাভুক্ত একজন আম্পায়ার ছিলেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ আম্পায়ার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচিত আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তাঁর সাত বছর ও পাঁচ বছর বয়সী দুটি পুত্রসন্তান রয়েছে। আমার জামাতাকে বর্বরোচিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের ওপর গোপালগঞ্জের আওয়ামী লীগের লোকজন যেভাবে আক্রমণ করে, গাড়ি ভাঙচুর করেছে, যা মধ্যযুগের বর্বরতাকে হার মানায়। আমি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। মামলার বিষয়ে দলের (বিএনপির) জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
গোপালগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক বিপ্লব কুমার পাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুরতহাল করার সময় নিহতের বাঁ হাত, মাথার পেছনে ও ঘাড়ে জখমের চিহ্ন দেখতে পেয়েছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে আঘাতের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিক উজ্জামান বলেন, শুক্রবার স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতির গাড়িবহরে যে হামলা হয়েছে, তা ছিল আওয়ামী লীগের পূর্বপরিকল্পিত। তারা একনায়কতন্ত্রে বিশ্বাসী। তারা বল প্রয়োগ করে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চায়। এ হামলা ও হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গোপালগঞ্জে মামলা করা হবে।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিচুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এখনো কোনো মামলা হয়নি। এলাকার পরিবেশ শান্ত রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বিক্ষোভ মিছিল
হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে উপজেলা বিএনপি। আজ শনিবার বিক্ষোভ মিছিলটি ঘাঘর বাজার চৌরাস্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ঘাঘরকান্দা এলাকায় পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওলিউর রহমান হাওলাদারের বাড়িতে এসে শেষ হয়।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার হাওলাদার, পৌর বিএনপির সভাপতি ইউসুফ আলী, সাধারণ সম্পাদক ওলিউর রহমান হাওলাদার, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম হাওলাদার, সাংগঠনিক সম্পাদক ফায়েকুজ্জামান শেখ, উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব মান্নান শেখ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব মাসুদ তালুকদারসহ সিনিয়র নেতারা বক্তব্য দেন।
এস এম মহিউদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী গতকাল শুক্রবার ঢাকা থেকে টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর নিজ বাড়িতে যাওয়ার সময় গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়ায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়। হামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক শওকত হোসেন দিদার নিহত ও অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আমরা এই বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ শেষে কোটালীপাড়ার বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি আহত নেতা-কর্মীদের দেখতে যান।