ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ৮৯টি স্থানে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ অংশেই রয়েছে ২৬ স্থান।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ঈদযাত্রায় এবার ভোগান্তির কারণ হতে পারে ৮৯টি স্থান। এর মধ্যে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৪১টি আর ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ৪৮টি স্থানে যানজটের আশঙ্কা করছে হাইওয়ে পুলিশ। তবে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে অবৈধ স্ট্যান্ড, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা, তিন চাকার যান চলাচল বন্ধসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষের ঈদযাত্রায় প্রতিবারই ভোগান্তির কারণ হয় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশ। এবারও সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর থেকে রূপগঞ্জের ভুলতা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার মহাসড়ক যাত্রীদের ভোগান্তির কারণ হতে পারে। অন্যদিকে যানবাহনের চাপ বেড়ে গেলে মেঘনা টোলপ্লাজায় লম্বা সময় আটকে থাকার শঙ্কা করছেন গাড়িচালকেরা। এতে করে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে।
সিলেটের পথে যানজটের যত কারণ
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের ১৫টি স্থানে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে ১১টি স্থানে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশ ঘুরে দেখা হয়। এ সময় কাঁচপুর সেতুর নিচে শ্যামবাজার বাসস্ট্যান্ড ও তারাব চৌরাস্তা, রূপসী বাসস্ট্যান্ড, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল মোড়ে মহাসড়ক দখল করে লেগুনা, ইজিবাইক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যাত্রী ওঠানামা করতে দেখা যায়।
যাত্রামুড়া বাজার ও তারাব থেকে ভুলতা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশ দখল করে অলস বাস ও ট্রাক পার্কিং করা ছিল। রূপসী, বরপা, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল মোড়গুলো রিকশা, ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও লেগুনার দখলে ছিল। এ ছাড়া ভুলতা উড়ালসড়কের নিচের মহাসড়ক দখল করে গড়ে তোলা অন্তত ১২টি অবৈধ স্ট্যান্ডে শত শত যানবাহন পার্কিং করে রাখতে দেখা যায়। উড়ালসড়কের নিচের মহাসড়কের দুই পাশ ছিল হকারের দখলে।
মহাসড়কটির ১২ কিলোমিটারজুড়েই তিন চাকার ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। উল্টো পথে যান চলাচল ও যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা তো ছিলই। সড়কে থাকা গর্ত ও সংস্কারকাজের কারণে গতকাল ছুটির দিনেও সড়কটিতে যান চলাচলে ছিল ধীরগতি।
ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জে চলাচলকারী যাতায়াত পরিবহনের একটি বাসের চালক মো. আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ঈদযাত্রা শুরু হওয়ার আগেই এই ১২ কিলোমিটার সড়কে তাঁরা যানজটে ভুগছেন। ঈদের আগে সমস্যাগুলোর সমাধান করা না গেলে ঈদে ঘরমুখী মানুষ বড় ভোগান্তিতে পড়বেন।
মহাসড়কটির নারায়ণগঞ্জ অংশের দায়িত্বে থাকা ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) আলী আশ্রাফ মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভুলতা ও গোলাকান্দাইল মোড় ইতিমধ্যে হকারমুক্ত করা হয়েছে। অবৈধ স্ট্যান্ড, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা, তিন চাকার যান চলাচল বন্ধসহ যানজটের সবগুলো কারণ চিহ্নিত করে এরই মধ্যে সেগুলোর প্রতিকারে কাজ শুরু করেছি।’
চট্টগ্রামের পথে ভয় টোলপ্লাজা
ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা অংশে ২৮টি স্থানকে যানজটপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের যে ১১টি স্থানে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে, এর মধ্যে ঢাকার সাইনবোর্ড বাসস্ট্যান্ড, কাঁচপুর সেতুর পূর্ব ঢাল, মদনপুর মোড়, মোগরাপাড়া মোড় ও মেঘনা টোলপ্লাজা অন্যতম।
অবশ্য মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করার পর বেশ কিছু ইউটার্ন ও ইউলুপ তৈরি করা হয়েছে। দূরপাল্লার যানবাহনের জন্য চারটি দ্রুতগতির লেন রয়েছে। তা ছাড়া কাঁচপুরে ওভারপাস এবং সাইনবোর্ড, মৌচাক, শিমরাইল, মদনপুর ও মদনগঞ্জে পদচারী–সেতু তৈরির পর এখন আগের মতো যানজটের আশঙ্কা নেই।
গতকাল সরেজমিন ঘুরে মহাসড়কটির সাইনবোর্ড থেকে মোগরাপাড়া পর্যন্ত সার্ভিস লেনে এলোমেলো গাড়ি পার্কিং ও তিন চাকার যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। এটি ঈদযাত্রায় সার্ভিস লেন ধরে চলাচলকারী যানবাহনগুলোর জন্য যানজটের কারণ হতে পারে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে ১৭টি স্থানে যানজট হতে পারে বলে ২১ মার্চ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) এক সভায় উঠে আসে। স্থানগুলো হলো মেঘনা টোলপ্লাজা, বলদাখাল, গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড, চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড, মাধাইয়া বাসস্ট্যান্ড, ইলিয়টগঞ্জ, সুয়াগাজী বাজার, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা কমপ্লেক্সের সামনের এলাকা, নুরজাহান হোটেলের সামনের অংশ, নন্দনপুর কোটবাড়ী ইউটার্ন, জাগুরঝুলি, আলেখারচর, সেনানিবাস মোড়, নাজিরা বাজার ইউটার্ন, নিমসার বাজার ইউটার্ন, চৌদ্দগ্রাম বাজার ও বিসিক মোড়।
গতকাল মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গোমতী সেতু টোলপ্লাজা, গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড, ইলিয়টগঞ্জ বাজার, চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া বাজার, চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড, বুড়িচং উপজেলার নিমসার সবজি বাজার, আদর্শ সদর উপজেলার নাজিরা বাজার ইউটার্ন, ময়নামতি সেনানিবাস এলাকা, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের পদুয়ার বাজার এলাকা, সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াগাজী বাজার, চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার ও চৌদ্দগ্রাম বাজার এলাকা ঘুরে দেখা হয়।
এসব স্থানে দেখা গেছে, কোথাও মহাসড়কের ওপর বাজার ও বাসস্ট্যান্ড একসঙ্গে রয়েছে। কোথাও বাজার ও বাসস্ট্যান্ড আলাদাভাবে রয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে সংযোগ সড়ক। মহাসড়কের ওপরে সংযোগ সড়কের যাত্রীরা নামছেন। কেউ মালামাল নিয়ে নামেন। তখন জটলা তৈরি হয়। এতে করে যানবাহনগুলোকে ধীরে চলতে হয়। এর ওপর মহাসড়কে চলছে তিন চাকার বাহন।
ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করা নিয়ে আজ বুধবার কুমিল্লা অঞ্চল হাইওয়ে পুলিশের একটি সভা আছে। কুমিল্লা অঞ্চলের হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খাইরুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ জেলার যানজটপ্রবণ এলাকাগুলো আমাদের চিহ্নিত করা আছে। ঈদযাত্রার সময় সেখানে নজরদারি বাড়বে।’