ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: সংগৃহীত

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা মারধর করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার  রাত সাড়ে আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। 

মারধরের শিকার ওই শিক্ষার্থীর নাম ফরহাদ কাউছার। তিনি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

কোটা সংস্কারের আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আটজন ফরহাদ কাউছারের ওপর হামলা চালিয়েছেন। তাঁরা হলেন মার্কেটিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের রবিন দাশ,  অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের রিয়াজ উদ্দিন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আক্তারুজ্জামান পাভেল, মার্কেটিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষেরে আশিকুর রহমান, নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২১-২২ শিক্ষাবর্ষের জুনায়েদ লামিম, গণিত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অর্ণব সিংহ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আসিফ এনতাজ রাব্বি এবং আগামী কমিটির পদপ্রত্যাশী মেজবাহউল হক। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী এনায়েত উল্লাহ ও আবু সাদাত মো. সায়েমের অনুযায়ী।

মারধরের শিকার ফরহাদ কাউছার বলেন, ‘আমি রাতের বাসে শহর থেকে টিউশনি শেষ করে ক্যাম্পাস গেটে নামি। এরপর আমাকে কয়েকজন ডেকে নিয়ে যান। তাঁরা আমার ফোন কেড়ে নিয়ে লক খুলতে বলেন এবং জানতে চান আমি কোটাবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আছি কি না। তাঁরা আমার ফোন চেক করতে থাকা অবস্থায় রবিন দাশ প্রথমে আমাকে মারধর করতে শুরু করেন। এরপর পাভেল, রাফি, শান্ত, রিয়াজ, রাব্বি আমাকে মারধর করেন।’

এই বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়কদের একজন মো. সাকিব হোসাইন বলেন, তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবেই আজকের সব কর্মসূচি পালন করেছেন। তবে এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির পর যে হামলা হয়েছে, তাতে তিনিসহ কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী সব শিক্ষার্থী মর্মাহত হয়েছেন। পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থীর ফোন চেক করা একপ্রকার সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। তাঁরা এ ঘটনার বিচার দাবি করেন। সাকিব আরও জানান, তাঁরা প্রশাসন বরাবর এই বিষয়ে অভিযোগ দেবেন। এরপরও যথাযথ বিচার না পেলে তাঁরা আদালত পর্যন্ত যাবেন।

এই বিষয়ে ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতা এনায়েত উল্লাহ জানান, গতকালকে ‘রাজাকার’ স্লোগানের পর ছাত্রলীগ তাদের প্রতিহত করে। আজকেও ওদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়েছে। একপর্যায়ে ওদের একজনের সঙ্গে মারামারি হয়। তিন হলের সবাই বিষয়টি জানে। সবাই বসে এর সমাধান বের করা হবে।

ফরহাদ কাউছারকে মারধরের অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাদাত মো. সায়েম জানান, ‘এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেব, যাতে কেউ বঙ্গবন্ধু হলের শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তোলার সাহস না পায়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী জানান, তাঁরা এখনো এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ শামসুজ্জামান মিলকী জানান, ঘটনা জানতে পেরেই প্রক্টোরিয়াল বডির সঙ্গে তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তাঁরা উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের থামানোর চেষ্টা করেন। আপাতত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।