প্রথম আলো ট্রাস্ট ও বিকাশের উদ্যোগ

পঞ্চগড়ের পাঁচ পাঠাগারে সাড়ে তিন হাজার বই উপহার

প্রথম আলো ট্রাস্ট ও বিকাশের উদ্যোগে পঞ্চগড়ের পাঁচটি পাঠাগারের প্রতিনিধিদের হাতে উপহারের বই তুলে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার দুপুরে পঞ্চগড় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের মীরগড় বাজার ঘেঁষে আবুল কালাম আজাদ নামের এক ব্যক্তির দান করা ১৬ শতক জমিতে ১৯৭২ সালে স্থানীয় লোকজন গড়ে তোলেন ‘মীরগড় আদর্শ পাঠাগার’। এরপর ১৯৮৬ সালে পাঠাগারটি নিবন্ধিত হয়। এই পাঠাগারে বইয়ের পাশাপাশি রাখা হয় খবরের কাগজ। গ্রামের ৭৬৭ সদস্য পাঠাগারটি পরিচালনা করেন। গ্রামের প্রায় সব বয়সী মানুষের অবসরের জায়গা এটি।

সদস্যরা ছাড়াও পাঠাগারসংলগ্ন একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেখানে গিয়ে বই পড়ে। প্রথম আলো ট্রাস্ট ও বিকাশের পক্ষ থেকে এই পাঠাগারে প্রায় ৮০০টি বই উপহার দেওয়া হয়েছে।

বই পেয়ে পাঠাগারের সভাপতি জালাল উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, পাঠাগারে প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বই পড়তে আসে। সন্ধ্যার পর যখন বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা বই পড়তে কিংবা আড্ডা দিতে আসেন, তখন তাঁদের মধ্যে অনেক আনন্দ দেখা যায়। কারণ, তাঁরা একে অপরের সঙ্গে দেখা করে কুশল বিনিময় করতে পারেন। এতে এলাকার মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি বেড়ে যায়। প্রথম আলো ট্রাস্ট ও বিকাশের দেওয়া এই বইগুলো পেয়ে পাঠাগারটি আরও সমৃদ্ধ হলো। একসঙ্গে এতগুলো বই মীরগড় আদর্শ পাঠাগারের জন্য অনেক বড় পাওয়া।

মীরগড় আদর্শ পাঠাগারসহ জেলার মোট পাঁচটি পাঠাগারকে গল্প, উপন্যাস, কবিতা ও ছড়ার প্রায় সাড়ে তিন হাজার বই উপহার দিয়েছে প্রথম আলো ট্রাস্ট ও বিকাশ। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে পঞ্চগড় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এসব পাঠাগারের প্রতিনিধিদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে বইগুলো তুলে দেওয়া হয়।

এ সময় পঞ্চগড় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান শেখ, মকবুলার রহমান সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এহেতেশামুল হক, নজরুল পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মকলেছার রহমান, পঞ্চগড় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জামিল চৌধুরী, প্রথম আলোর পঞ্চগড় প্রতিনিধি রাজিউর রহমান, প্রথম আলো বন্ধুসভা পঞ্চগড়ের উপদেষ্টা ও স্কুলশিক্ষক আতাউর রহমানসহ বন্ধুসভার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার মীরগড় আদর্শ পাঠাগারের পাশাপাশি আরও যেসব পাঠাগারকে বই উপহার দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো পঞ্চগড় জেলা শহরের নজরুল পাঠাগার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতি পাঠাগার, জেলার বোদা উপজেলার একুশ স্মৃতি পাঠাগার ও তেঁতুলিয়া উপজেলার শিশুস্বর্গ পাঠাগার।

বই পেয়ে একুশ স্মৃতি পাঠাগারের সভাপতি শেখ আবুল হোসেন বলেন, ‘জীবন গড়তে বইপড়ার বিকল্প নেই। সমাজের বিভিন্ন বয়সী মানুষ এখন মুঠোফোনে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এই মুঠোফোন আসক্তি দূর করতে বইপড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এই বইগুলো পেয়ে আমাদের পাঠাগারে বইয়ের সংখ্যা বাড়ল। এতে আমরা আরও বেশি পাঠককে বইপড়ার আহ্বান জানাতে পারব। পাঠাগারে বই উপহার দেওয়ার জন্য প্রথম আলো ট্রাস্ট ও বিকাশকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’

বইপড়ার মাধ্যমে জ্ঞান আহরণ করার পাশাপাশি মানুষের গুণাবলি প্রকাশিত হয় উল্লেখ করে অনুষ্ঠানের অতিথি পঞ্চগড় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান শেখ বলেন, বইয়ের মধ্যে যে স্বাদ আছে, আন্তরিকতা আছে, ভালোবাসা আছে তা গ্রহণ করতে হলে বইপড়ার বিকল্প নেই। শিশুদের হাতে বই দিতে হবে। প্রথম দিকে তারা পড়তে না পারলেও তারা ছবি দেখুক, মজা পাক। এতেই তাদের বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। প্রতিটি মানুষের নিজেকে পরিবর্তন করার জন্য, নিজেকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করার জন্য, নিজের জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য বইয়ের দিকে আকৃষ্ট হওয়া উচিত। প্রথম আলো সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি অনেক ভালো ভালো সামাজিক কাজ করে। তারা অনেক গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীকে পড়াশোনার জন্য বৃত্তি দিয়ে থাকে। তারই অংশ হিসেবে প্রথম আলো ট্রাস্ট ও বিকাশ যে বই উপহার দিচ্ছে, সত্যিই তা প্রশংসনীয়।

আয়োজকেরা বলেন, বিকাশ সারা বাংলাদেশে সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাঠাগার ও বৃদ্ধাশ্রমে মোট ৭৫ হাজার বই বিতরণ করছে। এই উদ্যোগের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে আছে প্রথম আলো ট্রাস্ট। বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে প্রথম আলো ট্রাস্টে বই কেনার জন্য অনুদানও দিতে পারেন গ্রাহক। অসংখ্য মানুষের ছোট ছোট অনুদানকে একত্রিত করে এই উদ্যোগের আওতায় ২০২২ সাল পর্যন্ত ৭২ হাজার ৫০০টি বই বিতরণ করা হয়েছে। ২০২৩ সালের বই বিতরণ চলমান রয়েছে।