প্রতি কেজিতে ৪০টি মিনি চমচম পাওয়া যায়; দাম ৩০০ টাকা
প্রতি কেজিতে ৪০টি মিনি চমচম পাওয়া যায়; দাম ৩০০ টাকা

টাঙ্গাইলে জনপ্রিয় হচ্ছে ‘মিনি চমচম’, কীভাবে এল এই মিষ্টি তৈরির ধারণা

টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি চমচম। তবে এখন ছোট আকারেও এই মিষ্টি তৈরি হচ্ছে, যা স্থানীয়ভাবে ‘মিনি চমচম’ নামে পরিচিত  হয়ে উঠেছে। বর্তমানে শহরের ১০ থেকে ১২টি দোকানে এই মিষ্টি তৈরি হচ্ছে। আর বেচাকেনাও চলছে ভালো।

টাঙ্গাইল শহরের পাঁচআনী বাজারে রয়েছে অন্তত ২৫টি মিষ্টির দোকান ও কারখানা। চমচমসহ টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি এখানে তৈরি ও বেচাকেনা হয়। এই বাজার ‘মিষ্টিপট্টি’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।

স্থানীয় মিষ্টি ব্যবসায়ীরা জানান, করোনাকালে বিধিনিষেধের কারণে মিষ্টির ব্যবসায় ধস নামে। এরপর চিনির দাম বাড়ায় মিষ্টির দামও বেড়ে যায়। এতে মিষ্টি বিক্রি অনেক কমে যায়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে লোকজন আর্থিক সাশ্রয় করতে চান। তাই অনেকে ছোট মিষ্টির খোঁজ করেন। মিনি চমচম ক্রেতাদের সেই চাহিদা পূরণ করছে। বর্তমানে প্রতি কেজির দাম ৩০০ টাকা; পাওয়া যায় ৪০টি মিনি চমচম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছয় মাস আগে শহরের মিষ্টিপট্টির টাঙ্গাইল সুইটসের মালিক দীপোজ্জ্বল সাহা প্রথম তৈরি করেন ছোট আকারের চমচম। সম্প্রতি দীপোজ্জ্বল সাহার সঙ্গে কথা বলে জানা যায় মিনি চমচমের ইতিহাস। তিনি জানান, তাঁর আদালতপাড়ার বাসার সামনে পুকুর রয়েছে। সাত থেকে আট মাস আগে সেখানে কয়েকজন নির্মাণশ্রমিক স্নান করতে এসেছিলেন। তাঁরা সবাই মিনিপ্যাক শ্যাম্পু ব্যবহার করছিলেন। ওই শ্রমিকেরা জানিয়েছিলেন, তাঁদের পক্ষে শ্যাম্পুর বোতল কেনা সম্ভব নয়। তাই তাঁরা মিনিপ্যাক শ্যাম্পু কিনে ব্যবহার করেন। মিনিপ্যাক না থাকলে তাঁদের শ্যাম্পু ব্যবহার করা সম্ভব হতো না।

দীপোজ্জ্বল সাহা বলেন, ‘নির্মাণশ্রমিকদের ওই কথা শুনে মিনিপ্যাক শ্যাম্পুর মতো মিনি চমচম তৈরির ভাবনা মাথায় আসে। কিছুদিনের মধ্যেই সেই ভাবনার বাস্তব রূপ দিই। প্রায় ছয় মাস আগে আমার কারখানায় প্রথম মিনি চমচম বিক্রি করি। ছোট সাইজের টাঙ্গাইলের চমচম ১২ থেকে ১৩টিতে এক কেজি হয়। সেখানে মিনি চমচম অন্তত ৪০টিতে কেজি হয়। ক্রেতাদের কাছে মিনি চমচম জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন আমার দোকানে ২৫ থেকে ৩০ কেজি মিনি চমচম বিক্রি হচ্ছে।’

বিক্রি ভালো দেখে শহরের মিষ্টিপট্টির অন্য ব্যবসায়ীরাও মিনি চমচম তৈরি করছেন। বর্তমানে ১০ থেকে ১২টি দোকানে এই মিষ্টি তৈরি হচ্ছে। আনন্দময়ী সুইটসের মালিক সুজন বসাক বলেন, ‘দীপোজ্জ্বল সাহা প্রথমে মিনি চমচম তৈরি করেন। তা ভালো চলছে। এ জন্য আমরাও এই চমচম তৈরি শুরু করেছি। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ কেজি মিনি চমচম বিক্রি হচ্ছে। দিন দিন বাড়ছে এর চাহিদা।’

কালাচাঁদ মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক রিপন ঘোষ বলেন, প্রতি কেজিতে ৪০টি মিনি চমচম পাওয়া যায়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজকেরা এই মিষ্টি বেশি নিচ্ছেন। এ ছাড়া ডায়াবেটিকসহ বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে যাঁরা মিষ্টি খেতে পারেন না বা মিষ্টি কম খেতে চান, তারাও মিনি চমচম নিচ্ছেন।

নিয়মিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে টাঙ্গাইল সাহিত্য সংসদ। সংগঠনটির সদস্য নির্মল চন্দ্র ভৌমিক জানান, বেশি দামের কারণে সব অনুষ্ঠানে মিষ্টি দেওয়া সম্ভব হতো না। আকারে ছোট হওয়ায় মিনি চমচমের দাম কম। তাই তাঁরা বিভিন্ন আয়োজনে এখন মিষ্টি দিতে পারেন।