গাজীপুরের শ্রীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ১ নম্বর সিঅ্যান্ডবি বাজারের পাশে আছে ছোট্ট একটি খাবার হোটেল। বুধবার বিকেল চারটায় সেখানে খাচ্ছিলেন পাঁচ তরুণ। হোটেলের বাইরে তিনটি বর্জ্য অপসারণের ইঞ্জিনচালিত ভ্যান দাঁড়ানো।
আলাপচারিতায় তাঁরা জানালেন, শ্রীপুর পৌর শহরের বর্জ্য অপসারণের কাজ করেন তাঁরা। বিভিন্ন এলাকা থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে কিছুক্ষণ আগে নির্দিষ্ট এলাকায় ফেলে এসেছেন। এরপর বসেছেন দুপুরের খাবার খেতে। কাজ শেষে দুপুরের খাবার খেতে একটু দেরি হয় সব সময়।
ঈদে বাড়ি যাবেন না?—প্রশ্নের উত্তরে তাঁরা বললেন, অনেকেই ঈদের ছুটিতে শহর ছেড়ে গেলেও পরিচ্ছন্নতার কাজ করার জন্য তাঁরা থেকে গেছেন। ঈদের দিন বর্জ্য অপসারণ শেষ করে তাঁরা পরদিন বাড়ি যাবেন।
পরিচ্ছন্নতাকর্মী মো. হৃদয়ের বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার কানিহারি গ্রামে। মা–বাবাসহ পুরো পরিবার গ্রামেই থাকে। শ্রীপুর পৌর শহরের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে এ কাজ করেন প্রায় চার বছর ধরে। তিনি বলেন, স্বাভাবিক কাজের পাশাপাশি কোরবানির ঈদে পশু জবাই করার পর বর্জ্য অপসারণের জন্য তাঁদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বর্জ্য অপসারণ করতে হবে সন্ধ্যার আগেই। কোনো ঈদেই বাড়ি যান না। অনেকে তাঁদের কাজটাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। কিন্তু এটা তাঁদের কাজ, তাঁরা এটা ঠিকভাবে করার চেষ্টা করেন।
পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বলেন, প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত শহরের বাড়ি বাড়ি ঘুরে নিজেদের ভ্যানে বর্জ্য সংগ্রহ করেন তাঁরা। এরপর সে বর্জ্য নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলেন। বিনিময়ে প্রতি মাসের ৭ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে ঘরপ্রতি ৭০ টাকা করে আদায় করেন। আদায় করা টাকা এলাকার একজনের কাছে জমা থাকে। সে টাকা থেকে প্রতি মাসে তাঁরা বেতন হিসেবে ১২ হাজার টাকা পান।
তাঁদের সঙ্গে আলাপে জানা গেল, শ্রীপুর পৌর শহরে বর্জ্য অপসারণের জন্য ৬০টি ভ্যান কাজ করে। আর এসব ভ্যানে আবর্জনা সংগ্রহের কাজে ১৫০ জন যুক্ত আছেন। তাঁরা পৌর শহরের শ্রীপুর মাওনা ১ নম্বর সিঅ্যান্ডবি, ২ নম্বর সিঅ্যান্ডবি আনসার রোড কেওয়া, বেতঝুড়ি, গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি, গিলারচালা, কড়ইতলা, বকুলতলা, ছাপিলা পাড়া, আমতলা, বহেড়ার চালা, ভাংনাহাটিসহ বিভিন্ন এলাকায় কাজ করেন।
খাইরুল ইসলাম নামের আরেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলেন, ‘গ্রামের বাড়িতে সবাই ঈদ করবে, আনন্দ করবে। আমরা আছি পরিষ্কারের দায়িত্বে। অনেক দিন ধরে এই কাজে আছি। পরিবারের বাইরে ঈদ করা আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। তবে মন তো একটু খারাপ থাকেই।’
শ্রীপুর উপজেলার উত্তর-পূর্ব দিকের গ্রাম কাওরাইদের বাসিন্দা মো. শান্ত। তাঁর বয়স ২৫। তিনি প্রায় দুই বছর ধরে পরিচ্ছন্নতার কাজে যুক্ত। তিনি বলেন, ‘আমরা বাড়িত গেলে ময়লা পরিষ্কার করব কেডা? ঈদের দুই দিন পরে বাড়িতে যাব। ছুটি পাওয়া যায় না। কোরবানির ঈদে তো একদমই ছুটি মিলে না।’
নিজে তিনটি ভ্যান গাড়ি কিনে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বর্জ্য অপসারণের ব্যবসা করেন মো. হাফিজ উদ্দিন। তাঁর বাড়ি শ্রীপুরের বরমী এলাকায়। তিনি বলেন, কোরবানির ঈদে এ কাজে যুক্ত সবাইকে প্রচুর ব্যস্ত থাকতে হয়। কাউকেই ছুটি দেওয়া হয় না। কর্মীরা ঈদের দিন কাজ করবেন জেনেই এ কাজে যুক্ত হন। তবে ঈদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন তাঁরা বাড়িতে যেতে পারেন।
শ্রীপুর পৌরসভার কনজারভেন্সি ইন্সপেক্টর (বর্জ্য ব্যবস্থাপনাবিষয়ক পরিদর্শক) মো. জহির রায়হান বলেন, কোরবানির ঈদে পৌর শহর পরিচ্ছন্নতার জন্য কর্মীদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা সকাল থেকেই নিজ নিজ এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন। এ জন্য তাঁদের অতিরিক্ত ৩ হাজার ৫০০ টাকা দেওয়া হবে।