অধিকাংশ সৌর বিদ্যুতায়িত বাতি ঠিকঠাক স্থাপিত হলেও রাতে কয়েক ঘণ্টা জ্বলেই নিভে যাচ্ছে।
যশোরের চৌগাছা পৌর শহরের ৩০২টি সৌর বিদ্যুতায়িত বাতির অধিকাংশেরই এখন নিবু নিবু অবস্থা। প্রকল্প বাস্তবায়নের বছর দুয়েক পর থেকেই বাতিগুলোয় আলো কমতে শুরু করে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাতিগুলোর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ এখন নষ্ট অবস্থায় রয়েছে। যেগুলো জ্বলছে, তা-ও সন্ধ্যার ঘণ্টা তিনেক পরই নিবু নিবু করে জ্বলে।
নতুন করে বাতিগুলোর ব্যাটারি বদলালে আবার আগের মতো আলো পাওয়া যাবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।
শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, চৌগাছা পৌর শহরের চৌগাছা সরকারি কলেজ থেকে বিশ্বাসপাড়া মসজিদ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের পাশে সৌর বিদ্যুতায়িত আটটি বাতির দুটি নষ্ট। অন্য ছয়টির মধ্যে তিনটি সন্ধ্যার দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর নিবু নিবু করে জ্বলছে।
বিশ্বাসপাড়ার বাসিন্দা মামুন শিশির বলেন, ‘এই বিশ্বাসপাড়ার এক কিলোমিটারের মধ্যে সৌরবিদ্যুতের আটটি বাতি স্থাপন করা আছে। এর মধ্যে দুটি বাতি একদমই জ্বলে না। অপর ছয়টির মধ্যে তিনটি আবার সন্ধ্যার পর দুই ঘণ্টা জ্বলেই নিভে যায়। নতুন স্থাপনের সময় সব বাতিই ভালো জ্বলত। এখন আর আগের মতো আলো হয় না।’
শুধু এই সড়ক নয়, চৌগাছা-যশোর সড়কের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পাওয়ার হাউসপাড়া, পৌর ভবন চত্বর, চৌগাছা ডিগ্রি কলেজের পূর্ব ও পশ্চিম পাশ, ডিভাইন সেন্টার, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা শিশু নিলয় ফাউন্ডেশন-সংলগ্ন এলাকাসহ বিভিন্ন সড়কের অন্তত ৫০টি সড়কবাতির আশপাশের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশ সৌর বিদ্যুতায়িত বাতি ঠিকঠাক স্থাপিত হলেও রাতে কয়েক ঘণ্টা জ্বলেই নিভে যাচ্ছে। এর মধ্যে কয়েকটি আবার জ্বলেই না।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা প্রকল্পের কাজ শেষ করে পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছি। ওয়ারেন্টির মেয়াদও শেষ। এখন আর কিছুই করার নেই আমাদের।কামরুল ইসলাম, স্বত্বাধিকারী, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিএসএল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল
চৌগাছা পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলায় চৌগাছা পৌর এলাকায় রোড লাইট সিস্টেম উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালের জুনে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় ২৩৮টি সৌর বিদ্যুতায়িত বাতি স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থায়নে নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। এর আগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৯৮ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা চুক্তিমূল্যে রাজবাড়ী জেলার বিডিএস এনার্জি নামের আরেকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৬৪টি সৌর বিদ্যুতায়িত বাতি স্থাপন করে। গত পাঁচ বছরে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুই দফায় চৌগাছা পৌর শহরে মোট ৩০২টি সড়কবাতি স্থাপন করে।
পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, এসব বাতির বাল্বসহ ব্যাটারির ওয়ারেন্টি (পরিবর্তন যোগ্য) তিন বছর, আর সৌর প্যানেল, খাম্বাসহ অন্যান্য সরঞ্জামের ওয়ারেন্টি আছে পাঁচ বছর। ইতিমধ্যে ব্যাটারিসহ বাল্বের ওয়ারেন্টির মেয়াদ শেষ হয়েছে।
যশোর-চৌগাছা সড়কের পাওয়ার হাউসপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও অন্তত এক কিলোমিটারের মধ্যে সাত থেকে আটটি সড়কবাতি রয়েছে। সব বাতি জ্বলে কি না, জানতে চাইলে ওই এলাকার ওয়েল্ডিং কারখানার স্বত্বাধিকারী রিপন হোসেন বলেন, ‘আমার কারখানার পাশের বাতিটি দেখি মাঝেমধ্যে জ্বলে, আবার নিভে যায়। এক সপ্তাহ জ্বলে, আবার দুই-এক দিন বন্ধ থাকে। এটা কেন হয়, জানি না।’
নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডের সাবকন্ট্রাক্টর বিএসএল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল দ্বিতীয় দফায় সড়কবাতি স্থাপনের কাজ করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা প্রকল্পের কাজ শেষ করে পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছি। ওয়ারেন্টির মেয়াদও শেষ। এখন আর কিছুই করার নেই আমাদের।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চৌগাছা পৌরসভার মেয়র নূর উদ্দীন আল মামুন বলেন, ‘শহরের ৭০ শতাংশ সৌরবাতি পূর্ণমাত্রায় আলো দিচ্ছে। অবশিষ্ট ৩০ ভাগ বাতির ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৫ ভাগ বাতি একেবারে নষ্ট হয়েছে, বাকি ১৫ ভাগ মিটমিট করে জ্বলে। নষ্ট হওয়া ১৫ শতাংশের ব্যাটারিসহ বাল্ব পৌরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে বদল করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’