জামালপুর সদর উপজেলায় যৌতুকের টাকা না পেয়ে গরম পানি দিয়ে স্ত্রীর শরীর ঝলসে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ওই অবস্থায় তিনি স্ত্রীকে পাঁচ দিন ঘরে বন্দী রাখেন বলে স্বজনদের অভিযোগ। সম্প্রতি শহরের গেটপাড় এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম মো. আল আমিন (৩১)। তিনি সদর উপজেলার মেষ্টা ইউনিয়নের চর মল্লিকপুর এলাকার বাসিন্দা। আল আমিন সদর উপজেলার জাফরশাহী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে গতকাল রাতে একটি মামলা হয়েছে। কয়েক মাস ধরে স্ত্রী নিশি আক্তারকে (২০) নিয়ে তিনি জামালপুর শহরের গেটপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন।
ভুক্তভোগী নিশি আক্তারের স্বজনেরা গত সোমবার বিকেলে তাঁকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (এডি) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নিশি আক্তারের শরীরের বেশ কিছু অংশ ঝলসে গেছে। তাঁর চিকিৎসা চলছে। এই মুহূর্তে শঙ্কার কোনো কারণ নেই।
ওই গৃহবধূ ও তাঁর স্বজনদের অভিযোগ, প্রায় ১০ মাস আগে নিশি ও আল আমিনের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে আল আমিনকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের একটি মোটরসাইকেল, দেড় লাখ টাকা মূল্যের বিভিন্ন আসবাব, সোনার দুটি আংটি ও একটি অ্যান্ড্রয়েড মুঠোফোন দেওয়া হয়। আরও ৫ লাখ টাকা যৌতুক আনতে স্ত্রীকে চাপ দেন আল আমিন। এ নিয়ে নিশিকে মারধর করতেন। বিষয়টি নিয়ে দুবার সালিসও হয়েছে। ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে আবারও নিশিকে টাকা আনার কথা বললে তিনি অস্বীকৃতি জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আল আমিন মারধর করে গরম পানি এনে স্ত্রীর শরীরে ঢেলে দেন। এভাবে পাঁচ দিন স্ত্রীকে ঘরে আটকে রাখেন আল আমিন। পরে তিনি স্ত্রীকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে যান। নিশির স্বজনেরা খবর পেয়ে তাঁকে উদ্ধার করে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
ওই গৃহবধূর বড় বোন মৌসুমি আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই আল আমিন যৌতুকের জন্য আমার বোনকে মারধর করতেন। তারপরও বোনকে সংসার করার পরামর্শ দিয়ে আসছি। আমরা তো জানতাম না, এভাবে আমার বোনকে নির্যাতন করবে। কতটা নিষ্ঠুর ও নির্মম হলে একজন মানুষ এভাবে নির্যাতন করে ঘরের মধ্যে পাঁচ দিন আটকে রাখেন।’
এ ঘটনায় মৌসুমি আক্তার বাদী হয়ে গতকাল রাতে সদর থানায় একটি মামলা করেছেন। এতে গৃহবধূর স্বামী, শ্বশুরসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মহব্বত কবীর প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে অভিযান চালিয়ে শহরের গেটপাড় এলাকা থেকে মামলার আসামি গৃহবধূর শ্বশুরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গৃহবধূর স্বামী আল আমিনকে গ্রেপ্তারে একাধিক দল মাঠে কাজ করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাঁকেসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।