কুমিল্লা ইপিজেডের রাসায়নিক বর্জ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ৭১ গ্রামের কৃষক

কুমিল্লা ইপিজেডের তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা কৃষক সমবায়ী ঐক্য পরিষদের সঙ্গে সভা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ইপিজেডের) ভেতরের কারখানার রাসায়নিক তরল বর্জ্যের কারণে ৭১টি গ্রামের কৃষকের ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এলাকার পুকুর, নদী, খাল, জলাশয় ও ডোবার পানি কালো ও গন্ধযুক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে মাছের উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। তরল বর্জ্যের পচা গন্ধে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ইপিজেডের আশপাশের বাসিন্দাদের সংগঠন কুমিল্লা জেলা কৃষক সমবায়ী ঐক্য পরিষদের সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এক সভা হয়েছে।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে সভায় অংশ নেন বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), পরিবেশ অধিদপ্তর, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিরা। সভায় ইপিজেড এলাকার আশপাশের শতাধিক জমির মালিক উপস্থিত ছিলেন।

সভায় কুমিল্লা জেলা কৃষক সমবায়ী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মুহম্মদ আখতার হোসাইন বলেন, কুমিল্লা ইপিজেডের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তদারক করার জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় একটি তদারকি কমিটি গঠন করে। আট সদস্যবিশিষ্ট বর্জ্য তদারকি কমিটিতে কোনো কৃষককে রাখা হয়নি। পরিষদ মনে করে, কুমিল্লা ইপিজেডের তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হলে বিমানবন্দর ও উনাইসার এলাকার খাল খনন করে দুই পাড়ে সীমানাপ্রাচীর করতে হবে। ইপিজেডের ভেতরে সিটি করপোরেশনের দুটি নালা সরিয়ে ফেলতে হবে। কারখানার তরল বর্জ্য কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারে (সিইটিপি) ফেলতে হবে। সিইটিপি সব সময় চলে কি না, তা অনলাইনে মনিটরিং করতে হবে। এই তরল বর্জ্যের কারণে ক্ষতির পরিমাণ ৫৯০ কোটি। ইপিজেডকে এই বিশাল অঙ্কের টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

এর থেকে পরিত্রাণ পেতে চান ৭১টি গ্রামের অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। এ নিয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিলে কৃষকেরা ও সমবায়ীরা কঠোর আন্দোলনে যাবেন বলে জানান।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে ইপিজেডের তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতি দেখতে চান তিনি। খাল সংস্কারের ব্যাপারে সিটি করপোরেশনকে এগিয়ে আসতে হবে।

সভায় পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শওকত আরা কলি বলেন, ইপিজেডের তরল বর্জ্যের কারণে খালের মধ্যে গন্ধ পাওয়া গেছে। পরীক্ষা করেও এর সত্যতা পাওয়া গেছে।

ইপিজেডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুরুজ্জামান মিয়া সভায় বলেন, ‘কেবল ইপিজেডের তরল বর্জ্যের কারণে খাল, পুকুর ও টিউবওয়েলের পানি কালো হচ্ছে না। কুমিল্লা বিমানবন্দরের রানওয়ের ভেতরে গরুর খামার আছে। এই খামারের গরুর মূত্র খালে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে টেকনিক্যাল কারণে শোধনাগারে ঝামেলা হচ্ছে।’

কুমিল্লা জেলা কৃষক সমবায়ী ঐক্য পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, দক্ষিণ কুমিল্লার মানুষের দুঃখ ইপিজেডের তরল বর্জ্য। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে চান ৭১টি গ্রামের অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। পুকুর, নদী, খাল, জলাশয় ও ডোবায় তরল বর্জ্যের কারণে মাছের উৎপাদন হচ্ছে না। সবজি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ধানি জমিতে ধান আগের মতো হচ্ছে না। তরল বর্জ্যের দুর্গন্ধে পুরো এলাকার মানুষ কষ্টে আছে। এ নিয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিলে কৃষকেরা ও সমবায়ীরা কঠোর আন্দোলন করবেন।

২০০০ সালে কুমিল্লা বিমানবন্দর এলাকার ২৬৭ একর জমি নিয়ে কুমিল্লা ইপিজেড প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে শিল্প প্লট আছে ২৪৩টি। এখানে কর্মরত ৪৭ হাজার শ্রমিক। তাঁদের বেশির ভাগই নারী শ্রমিক। ভৌগোলিকভাবে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১৬৭ কিলোমিটার পশ্চিমে ও ঢাকা থেকে ৯৭ কিলোমিটার পূর্বে কুমিল্লা বিমানবন্দর এলাকায় কুমিল্লা ইপিজেডের অবস্থান।