স্বাধীনতা পুরস্কারের তালিকা থেকে অরন্য চিরানের নাম বাদ দেওয়ার দাবিতে আজ বুধবার দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করা হয়েছে। মানববন্ধনে শিক্ষক, সাহিত্যিক, নাগরিক সংগঠন ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নেতারা অংশ নেন। ২০২৪ সালের স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ১০ জনের নাম গত শুক্রবার ঘোষণা করেছে সরকার। এতে সমাজসেবা ক্যাটাগরিতে অরন্য চিরানের নাম রয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, অরন্য চিরান একজন সাধারণ এনজিওকর্মী। তাঁর এমন কোনো কৃতিত্ব নেই যে তিনি রাষ্ট্রের এত বড় পুরস্কার পেতে পারেন। তাঁর এই পুরস্কার বাতিলের জন্য ইতিমধ্যে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয়েছে।
অরন্য চিরান ময়মনসিংহে ‘সারা সংস্থা’ নামের একটি এনজিওতে চাকরি করেন। তাঁর বাড়ি ধোবাউড়া উপজেলায়। তিনি নিজেকে আদিবাসীদের সংগঠন ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ময়মনসিংহ সদর উপজেলা শাখার চেয়ারম্যান দাবি করেন। তবে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিপুল হাজং বলেন, অরন্য চিরানকে অ্যাসোসিয়েশন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মানববন্ধনের বক্তব্যের বিষয়ে অরন্য চিরান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমার স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ায় যাঁরা ঈর্ষান্বিত, তাঁরাই অপপ্রচার করছেন। যথাযথ নিয়ম মেনেই আমাকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই।’
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক বিপুল হাজং বলেন, ‘অরন্য চিরান কোনোভাবেই স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য নন। সমাজসেবায় তাঁর ন্যূনতম কোনো অবদান নেই। বরং তাঁর বিরুদ্ধে আদিবাসীদের বিস্তর অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। আমরা সেসব দুর্নীতির প্রমাণ দিতে পারব।’
ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক স্বাধীন চৌধুরী বলেন, ‘অরন্য চিরানকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি ও জানি। তাঁর এমন কোনো কর্ম নেই, যা মানুষকে, কোনো এলাকাকে অথবা কোনো জনগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করতে পারে। গারো সম্প্রদায়ের মধ্যেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ আছেন। তাঁরাও এখনো এমন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পাননি। অথচ অরন্য চিরানকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। হতে পারে অরন্য চিরান কর্তৃপক্ষকে কোনো না কোনোভাবে প্ররোচিত করেছেন অথবা কর্তৃপক্ষ ভুল করেছে। স্বাধীনতা পুরস্কারের তালিকায় এ দেশের অনেক মহান মানুষের নাম রয়েছে। কাজেই এ তালিকা থেকে অরন্য চিরানের নাম বাদ দেওয়া উচিত।’
মানববন্ধনে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীসহ দেশের আরও মহান মানুষ। তাঁদের কর্মের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, কেন তাঁদের পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। সে তুলনায় অরন্য চিরানের কোনো ধরনের সমাজসেবামূলক কাজ নেই। তিনি আরও বলেন, ‘অরন্য চিরান হয় ভুল তথ্য দিয়েছেন অথবা কোনো অসদুপায়ে তিনি এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। এর আগেও দেখেছি, রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে দেশে এমন ঘটনা ঘটেছে। পরে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। অরন্য চিরানের পুরস্কারও প্রত্যাহারের দাবি জানাই।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। গত শনিবার ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে অরন্য চিরানের এই পুরস্কার বাতিলের দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন জানানো হয়। আবেদনে অরন্য চিরানের নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির কথাও তুলে ধরা হয়েছে।