মাদারীপুরে জিপিএ-৫ সংবর্ধনা

‘তোমাদের হাতে দেশ যেন পথ না হারায়’

মাদারীপুরে শিখো-প্রথম আলোর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ক্রেস্ট হাতে কৃতী শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস। মঙ্গলবার সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

সকাল থেকেই গুমোট আকাশ। এই বুঝি বৃষ্টি এল। এর মধ্যেই দলে দলে কৃতী শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করে মাদারীপুরে জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে। অনেকের সঙ্গে অভিভাবকেরাও আসেন। মুহূর্তেই মিলনায়তন প্রাঙ্গণ যেন উৎসবের রূপ নেয়।

এখানেই আজ মঙ্গলবার উৎসবমুখর পরিবেশে শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখোর পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রথম আলোর আয়োজনে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল প্রথম আলো বন্ধুসভা।

বিদ্যালয়ের পাট চুকানোর কয়েক মাস পর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় কৃতী শিক্ষার্থীরা গল্প-আড্ডায় মেতে ওঠে। সহপাঠীদের পেয়ে কেউ জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময় করে। কেউ সেলফি তোলে। অনেকে গ্রুপ ছবি তোলে। অভিভাবকদের উৎসাহও ছিল চোখে পড়ার মতো।

এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মাদারীপুরের পাঁচ উপজেলার জিপিএ-৫ পাওয়া ২০০ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। সারিবদ্ধভাবে তারা নিবন্ধনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। সকাল ৯টায় নির্ধারিত বুথ থেকে ক্রেস্ট, স্ন্যাকস ও উপহার সংগ্রহের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। অভিভাবকেরা অনুষ্ঠান উপভোগের পাশাপাশি বিনা মূল্যে আজকের প্রথম আলো পড়েন।

মাদারীপুরে শিখো-প্রথম আলো সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সন্তান ও তার বন্ধুদের সঙ্গে এক মা সেলফি তুলছেন। মঙ্গলবার সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে

সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে মিলনায়তন কানায় কানায় ভরে যায়। ১০টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান পর্ব। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে গলা মেলায় শিক্ষার্থী ও অতিথিরা। জাতীয় সংগীত শেষ হওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ছাত্র-জনতার প্রতি সম্মান জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর কৃতী শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর মাদারীপুর প্রতিনিধি অজয় কুন্ডু।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফরিদুল ইসলাম, একই বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মহাদেব বর্মণ ও মাদারীপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ হিতেন চন্দ্র মণ্ডল। মো. ফরিদুল ইসলাম কৃতী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘জীবনে সফল হতে হলে ভালো শিক্ষার্থীর পাশাপাশি ভালো মানুষ হওয়া খুব জরুরি। ভালো মানুষ হতে হলে ভালো লেখকের বই বেশি বেশি পড়তে হবে। কারণ, বই কেবল মানুষকে ভালোর পথে নিয়ে যায়। তোমরা মেধাবী, তোমাদের হাত ধরে এগিয়ে যাবে দেশ। তোমরাই আগামীর বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। তোমাদের হাতে দেশ যেন পথ না হারায়।’

মহাদেব বর্মণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের বুদ্ধি ও মেধা প্রখর। যদি সেটা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারো, তাহলে তোমরাই বাংলাদেশ। তোমাদের হাতে দেশ ভুল পথে যাবে না। তাই ভালো ফলাফলের পাশাপাশি তোমাদের সব ক্ষেত্রেই যোগ্য ও সুনাগরিক হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাহলেই কেবল পুরো জাতির কাছে তোমাদের মুখ উজ্জ্বল হবে।’

মাদারীপুরে শিখো-প্রথম আলো সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সন্তান ও তার বন্ধুদের ছবি তুলে দিচ্ছেন অভিভাবকেরা। মঙ্গলবার সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে

মাদককে না, মুখস্থকে না, মিথ্যাকে না—শিক্ষার্থীদের এই শপথবাক্য পাঠ করান কুষ্টিয়ার প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক তৌহিদী হাসান। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাঁর সঙ্গে হাত উঠিয়ে ভবিষ্যতে আরও ভালো ফল করে, ভালো মানুষ হয়ে দেশ ও সমাজের কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।

‘স্বপ্ন দেখো, জীবন গড়ো’ স্লোগানে সারা দেশের ৬৪টি জেলায় চলছে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। আয়োজনটি পাওয়ার্ড বাই বিকাশ এবং সহযোগিতায় থাকছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বহুব্রীহি, সানকুইক, কনকা-গ্রি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।

অজয় কুন্ডু ও জেলা বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুমান জুলিয়ার উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে গান ও নাচ পরিবেশন করেন বন্ধুসভার শিল্পীরা। এতে নির্দেশনা দেন বন্ধুসভার সাংস্কৃতিক সম্পাদক বাঁধন খান। সাংস্কৃতিক পর্বে কৃতী শিক্ষার্থীরাও অংশ নেয়। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মাদারীপুর বন্ধুসভার সভাপতি সোহেল রানা। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বন্ধুসভার উপদেষ্টা মোহসীন খান, অখিল সরকার, শিক্ষক সৌমিত্র কুমার দাশ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে আসা রাজৈর পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের কৃতী শিক্ষার্থী প্রিয়ন্তী মঞ্চে উঠে তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলে, ‘দীর্ঘ ১০ বছরের স্কুলজীবন শেষ করে আমরা আজ এখানে এসেছি। জেলায় আমরা যারা জিপিএ-৫ পেয়েছি, তাদের সবাইকে এখানে একসঙ্গে দেখে খুব ভালো লাগছে। প্রথম আলোর এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। সামনের পথে আমাদের আরও ভালো করতে হবে।’

মাকে সঙ্গে নিয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেয় কালকিনি উপজেলার কালিনগর ফাসিয়াতলা উচ্চবিদ্যালয়ের কৃতী শিক্ষার্থী শাহরিয়ার সোনিয়া আক্তার। সে বলে, ‘আমার এ অর্জনের পেছনে মায়েরই সব অবদান। মায়ের পাশে বসে অনুষ্ঠান দেখে খুব ভালো লাগছে।’