পঞ্চগড়ের তেঁতু্লিয়া উপজেলা সদর ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা তেলিপাড়া এলাকায় ভারত থেকে আসা বন্য হাতি ঠেকাতে বৃহস্পতিবার রাতে মশাল জ্বালিয়ে অবস্থান নিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা
পঞ্চগড়ের তেঁতু্লিয়া উপজেলা সদর ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা তেলিপাড়া এলাকায় ভারত থেকে আসা বন্য হাতি ঠেকাতে বৃহস্পতিবার রাতে মশাল জ্বালিয়ে অবস্থান নিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা

তেঁতুলিয়া সীমান্তে আবার হাতির আনাগোনা, আতঙ্কে এলাকাবাসী

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ভারতীয় বন্য হাতির তাণ্ডবের দুদিনের মাথায় সীমান্তে আবার দুটি হাতির আনাগোনা দেখা গেছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। হাতি দুটি যাতে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে, সে জন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মশাল জ্বালিয়ে বাড়ির বাইরে অবস্থান নিয়েছেন এলাকাবাসী।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাতি দুটি তেঁতুলিয়া শহর-সংলগ্ন তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা তেলিপাড়া ৪৪৩ মেইন পিলার থেকে ২০০ গজ দূরে ভারতের হাফতিয়াগছ বিএসএফ ক্যাম্প-সংলগ্ন একটি বনে অবস্থান করছে। হাতি দুটি যেকোনো সময় বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে পারে। এ ঘটনায় তেলিপাড়া, মাগুরা ও কলোনিপাড়া গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

এর আগে দুপুরে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে ও হাতিকে বিরক্ত করা থেকে বিরত থাকতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। এ ঘটনায় আজ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিন দফায় তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি তেঁতুলিয়া সদরের তেলিপাড়া ও ভারতের হাফতিয়াগছ ফরেস্টের শূন্যরেখায় উপস্থিত হয়ে বিজিবি ও বিএসএফের সহায়তায় ভারতীয় বন দপ্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জরুরি সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি হাতি দুটিকে ট্রাংকুলাইজার দিয়ে দ্রুত উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

তেঁতুলিয়ার মাগুরা এলাকার বাসিন্দা মো. রফিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বাড়ি থেকে হাতি দুটি দেখা যাচ্ছে। যেকোনো সময় আমাদের এলাকায় ঢুকতে পারে। আমরা এখন বাড়ির বাইরে মশাল জ্বালিয়ে অবস্থান নিয়েছি। উপজেলা প্রশাসন থেকে আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’

রাত পৌনে ৯টার দিকে ইউএনও ফজলে রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, হাতি দুটি বাংলাদেশে প্রবেশের আশঙ্কা থাকায় তাঁরা ভারতের বন দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। হাতি দুটি যাতে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে, সে জন্য এপারে মশাল জ্বালানোর পাশাপাশি পটকা ফোটানো হচ্ছে। উৎসুক জনতাকে সামলানোর জন্য পুলিশের পাশাপাশি আনসার ও গ্রাম পুলিশের সদস্যরা কাজ করছেন। ভারতের বন দপ্তরের কর্মকর্তারা হাতি দুটিকে তাঁদের দিকে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাঁরা তাঁদের সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে আছেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার ভোরে ভারতীয় দুটি বন্য হাতি তেঁতুলিয়ার শালবাহান ইউনিয়নের ইসলামবাগ এলাকার ৭৩৫ নম্বর মেইন পিলারের ৩ নম্বর সাবপিলার এলাকা দিয়ে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া ভেঙে বাংলাদেশে ঢোকে। পরে হাতি দুটি তীরনইহাট ইউনিয়নে বিভিন্ন এলাকা দিয়ে সকাল সাতটার পর বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ এলাকায় মহানন্দা নদী-সংলগ্ন একটি ভুট্টাখেতে অবস্থান নেয়। এ সময় তীরনইহাট ইউনিয়নের দৌলতপাড়া এলাকার এক ব্যক্তির একটি গরুকে আহত করে। পরে দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ এলাকায় এসে জামাল ও শমসের নামের দুই ব্যক্তির বাড়িঘর ভাঙচুর করে। বিকেলে হাতি দুটির আক্রমণে নুরুজ্জামান (২৩) নামের বাক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এক তরুণ মারা যান। ওই দিন রাতে হাতি দুটি বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিমগঞ্জ এলাকা থেকে মহানন্দা নদী পার হয়ে কাঁটাতারের বেড়ার গেট ভেঙে আবার ভারতে প্রবেশ করে।