ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা কৃষক দলের কর্মী সম্মেলনে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসিরুল ইসলামকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা ঘটেছে। অন্তত এক ঘণ্টা পর সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ। গতকাল বুধবার বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সময়ে উপজেলা সদরে উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে ওই কর্মী সম্মেলনে হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আকরামুজ্জামান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা বিএনপি ও কৃষক দলের একাধিক নেতার অভিযোগ, নাসিরুল মাঝেমধ্যে কর্মিসভার নামে আলফাডাঙ্গা আসেন। সেখানে তিনি দলের কিছু নেতাকে ডাকেন এবং উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতাদের ডাকেন না। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে একাংশের নেতা-কর্মীরা তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
এদিকে ঘটনাটির প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ওই অনুষ্ঠান শুরুর কয়েক মিনিটের মাথায় উপজেলা বিএনপি ও কৃষক দলের একাংশের শতাধিক নেতা-কর্মী সেখানে আসেন। এসেই তাঁরা সেখানে উপস্থিত কয়েকজন নেতা-কর্মীর সঙ্গে তর্ক ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে ওই অংশের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আকরামুজ্জামানকে কার্যালয়ের ভেতরে রেখে বাইরে থেকে দরজা আটকে দেন। এরপর অন্তত এক ঘণ্টা পর ওই দুজনকে উদ্ধার করে বাইরে আনেন আলফাডাঙ্গা থানা-পুলিশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা বিএনপি ও কৃষক দলের একাধিক নেতা অভিযোগ করেন, নাসিরুল মাঝেমধ্যে কর্মিসভার নামে আলফাডাঙ্গা আসেন। সেখানে তিনি দলের কিছু নেতাকে ডাকেন এবং উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতাদের ডাকেন না। এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি (নাসিরুল) জবাব দেন, দলের চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে এভাবে কর্মী সমাবেশ করছেন। এ কথাতে ক্ষুব্ধ হয়ে একাংশের নেতা-কর্মীরা তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল্লাহ আল মিলন বলেন, ‘নাসিরুল সাহেব বর্তমানে ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী) আসনে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহ জাফর বিএনএমে যোগ দেওয়ায় আসনটিতে তাঁর (নাসিরুল) গুরুত্ব অনেকাংশে বেড়েছে। তবে নাসিরুল সাহেব দলের মধ্যে গ্রুপিং করে নিজেদের মধ্যে ফাটল ধরিয়ে রাখেন।’
ছাত্রদলের ওই নেতা আরও বলেন, ‘আজ (বুধবার) মূলত বিএনপি ও কৃষক দলের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা তাঁর কাছে জানতে গিয়েছিল কী কারণে তিনি এত গ্রুপিং করেন। উত্তর সন্তোষজনক না হওয়ায় বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা তাঁকে বিএনপি অফিসে এক ঘণ্টার বেশি অবরুদ্ধ রাখেন। উদ্ধারের সময় পুলিশ বিএনপির চার–পাঁচজন নেতা-কর্মীকে থানায় নিয়ে যায়। পরে আমরা মুচলেকা দিয়ে তাঁদের ছাড়িয়ে এনেছি।’
আমাকে অবরুদ্ধ করবে কেন? কিছু কর্মী এসে কয়েকজন নেতার নামে আমার কাছে নালিশ করেছেন। যাঁদের নামে নালিশ এসেছে, তাঁরা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফরের বিএনএমে যোগ দেওয়ায় আগেই তাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে।খন্দকার নাসিরুল ইসলাম, কৃষক দল নেতা
তবে নিজের অবরুদ্ধ হওয়ার খবরকে ভিত্তিহীন দাবি করেছেন খন্দকার নাসিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাকে অবরুদ্ধ করবে কেন? কিছু কর্মী এসে কয়েকজন নেতার নামে আমার কাছে নালিশ করেছেন। যাঁদের নামে নালিশ এসেছে, তাঁরা শাহ মোহাম্মদ আবু জাফরের বিএনএমে যোগ দেওয়ায় আগেই তাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে।’
এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘বিক্ষুব্ধ কর্মীদের আমি বলেছি, যাঁদের নামে নালিশ করছেন, তাঁরা সবাই বিএনএমের। তাঁদের ব্যাপারে এখন আর আমাদের দলের করণীয় কিছু নেই। এ কথায় কর্মীদের কেউ কেউ পার্টি অফিসে ইটপাটকেল ছোড়ার চেষ্টা করেছেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করেছে।’
নাসিরুলের বিরুদ্ধে দল ও সংগঠনটির মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির অভিযোগ অনেক দিনের বলে মন্তব্য করেছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ জুলফিকার হোসেন। তিনি বলেন, ‘খন্দকার নাসিরুল কর্মিসভায় সব নেতা–কর্মীকে ডাকেন না। তাঁর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ অনেক দিনের। দলে গ্রুপিং করার কারণেই আজ দুঃখজনক ও লজ্জাজনক এ ঘটনাটি ঘটল। এতে প্রকারান্তরে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হলো।’
ওই ঘটনার বিষয়ে আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিম রেজা বলেন, উপজেলা বিএনপি অফিসে নাসিরুলকে নিয়ে ছোটখাটো ঘটনা ঘটেছে। বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা সেখানে ঘটেনি।