লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনে উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণের সময় ৫৭ সেকেন্ডে ৪৩টি ব্যালটে সিল মারার ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তদন্ত কমিটি। আজ বুধবার লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে ওই কেন্দ্রে ভোট নেওয়া কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়।
উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন তাঁদের এ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন। পরে তিনি বেলা একটার দিকে কেন্দ্রটি পরিদর্শনে যান।
গতকাল মঙ্গলবার লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ স্থগিত রেখে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রিটার্নিং কর্মকর্তা, লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে পৃথক পৃথকভাবে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে গত রোববার উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে একটি ভোটকেন্দ্রে ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ওই নেতাকে একাধিক ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল মারতে দেখা যায়। পরে ভোট গ্রহণে অনিয়ম নিয়ে সোমবার প্রথম আলোর অনলাইনে ওই ভিডিওসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, ৫৭ সেকেন্ডের ভিডিওতে ভোটকক্ষে বসে এক ব্যক্তি ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল মারছেন। তাঁর গলায় নৌকা প্রতীকের কার্ড ঝুলছে। এ সময় তাঁকে ৪৩টি ব্যালটে নৌকা প্রতীকে সিল মারতে দেখা যায়।
এদিকে ব্যালট পেপারে নৌকা সিল মারা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আজাদ হোসেনের সঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তা কথা বলতে পারেননি। ঘটনার পর থেকেই তাঁর মুঠোফোন বন্ধ রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিন দিন ধরে আজাদ এলাকায়ও নেই। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি।
আজাদ হোসেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নের দক্ষিণ খাগুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার এজেন্ট হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। আজাদ চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। গত অক্টোবর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাঁকে বহিষ্কার করেছে জেলা ছাত্রলীগ।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল ১১টা থেকে দিঘলী ইউনিয়নের দক্ষিণ খাগুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, দায়িত্বে থাকা ৮ সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৪ পুলিশ সদস্য, ৮ আনসার সদস্য, প্রার্থীদের ১৬ পোলিং এজেন্টের লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য গ্রহণ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রে ভোটে অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত চলছে। আজ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। খুব শিগগির তদন্ত প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হবে। এরপর কমিশন সিদ্ধান্ত নেবেন।
এদিকে লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের উপনির্বাচনের দিন জাতীয় পার্টি ও জাকের পার্টির প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। নির্বাচনে কারচুপি, এজেন্ট বের করে দেওয়া ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে গত রোববার বেলা দুইটার দিকে দুই প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবে দুই প্রার্থী পৃথকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে বর্জনের এ ঘোষণা দিয়েছেন।
ভোট গ্রহণ শেষে ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, নৌকা প্রতীক নিয়ে গোলাম ফারুক পেয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার ৫৯৯ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ রাকিব হোসেন লাঙল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩ হাজার ৮৪৬ ভোট।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শাহজাহান কামাল মারা যান। ৩ অক্টোবর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ৪ অক্টোবর উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়।