যশোরের ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিকল্পিত জোয়ারাধার (টিআরএম) প্রকল্প বাতিল করে সেচপাম্প প্রকল্প বাস্তবায়ন করে দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা লুট করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এই দুর্নীতির জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব কবির বিন আনোয়ারের বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিচারের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে যশোর জেলার ভবদহ ও তৎসংলগ্ন বিল এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনবিষয়ক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ দাবি জানান। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সভার প্রধান অতিথি ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মুহাম্মদ আমিরুল হক ভূঞা। সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. আজহারুল ইসলাম।
উন্মুক্ত আলোচনায় ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সদস্য জিল্লুর রহমান বলেন, ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। সরকার প্রকল্প গ্রহণও করেছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব কবির বিন আনোয়ার ওই এলাকাকে জলাভূমি দেখিয়ে টিআরএম প্রকল্প বাতিল করে পানি সেচ প্রকল্প গ্রহণ করেন। টাকা লুটপাটের জন্য সেদিন ভুল তথ্য উপস্থাপন করে সেচ প্রকল্প গ্রহণ করায় এ বছর জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এ জন্য তাঁদের বিরুদ্ধ তদন্ত করে এ দুর্নীতির বিচার করতে হবে।
বক্তারা বলেন, মানুষের বাড়িঘর, রাস্তাঘাটে পানি উঠেছে। এই পানি সরানোর জন্য এ মুহূর্তে চলমান সেচ প্রকল্প বাতিল করে আমডাঙ্গা খাল খনন করতে হবে। এ ছাড়া প্রাকৃতিকভাবে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য ওই এলাকার হরি, ট্যাকা, শ্রী, আপার ভদ্রাসহ কয়েকটি নদ–নদী খনন করতে হবে। দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের জলাবদ্ধতা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এ জন্য উজানে মাথাভাঙ্গা নদীর সঙ্গে ভৈরব নদের সংযোগ স্থাপন করতে হবে। সরকারি খাল ও নদ–নদীর বিভিন্ন অংশ মৎস্যঘেরের মালিকদের দখলে রয়েছে। দখলমুক্ত করতে হবে। নেটপাটা অপসারণ করতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পানিসম্পদসচিব নাজমুল আহসান বলেন, ‘গত দুই বছর বৃষ্টি কম ছিল। যে কারণে আমরা ভবদহ অঞ্চলের পরিস্থিতি বুঝতে পারিনি। এ বছর আকস্মিকভাবে বৃষ্টি বেশি হয়েছে। আজ আমরা ভবদহ অঞ্চল ঘুরে পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছি। মানুষের ঘরে–উঠানে পানি। অবর্ণনীয় দুর্ভোগে রয়েছে মানুষ। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করে জলাবদ্ধতা নিরসনে সমাধানের ভালো পথ খুঁজতে পারব বলে আশা করছি।’
নাজমুল আহসান বলেন, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। টিআরএম স্থায়ী সমাধান নয়। সব বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন করাও যাবে না। সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির বলেন, ‘এখনই ভাসমান ১০টি ড্রেজিং দিয়ে খাল খনন করে পানি সরাতে হবে। আমরা ইরি, বোরো ধানের আবাদ করতে চাই। এর জন্য যা যা করা দরকার, তার সব করতে হবে।’ তিনি বলেন, ভবদহ অঞ্চলের ১০টি উপজেলার ৪ শতাধিক গ্রাম জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী হয়েছেন ১০ লক্ষাধিক মানুষ। সেচপাম্প দিয়ে ভবদহের পানি সরানো যাবে না। এ জন্য আমডাঙ্গা খালসহ সব খাল সংস্কার, নেটপাটা উচ্ছেদ ও পানিনিষ্কাশনের বিকল্প পথ খুঁজে বের করতে হবে।
সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল হোসেন আজাদ, জামায়াতে ইসলামীর জেলা নায়েবে আমির গাজী এনামুল হক, দৈনিক লোকসমাজ পত্রিকার সম্পাদক শান্তনু ইসলাম, সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী আবদুল হামিদ, সদস্য বৈকুণ্ঠ বিহারী রায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাশেদ খান প্রমুখ।