আওয়ামী লীগ প্রার্থী বি এম ফরহাদ হোসেন ও আওয়ামী লীগ নেত্রী রোমা আক্তার
আওয়ামী লীগ প্রার্থী বি এম ফরহাদ হোসেন ও আওয়ামী লীগ নেত্রী রোমা আক্তার

একরামুজ্জামানের সভা থেকে দলীয় প্রার্থীকে হুমকি আওয়ামী লীগ নেত্রীর

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য বি এম ফরহাদ হোসেনকে আগামী ৭ জানুয়ারির পর নাসিরনগরের মাটিতে আর পা রাখতে দেবেন না বলে হুমকি দিয়েছেন দলেরই এক নেত্রী। গত বৃহস্পতিবার রাতে নাসিরনগর উপজেলা সদরের নাসিরপুর বাজারে স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামানের নির্বাচনী সভা থেকে এই হুমকি দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রোমা আক্তার।

রোমা আক্তারের হুমকির বক্তব্যের একটি ভিডিও গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ফরহাদ হোসেনকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগের এই নেত্রী বলেন, ‘তিনি (ফরহাদ হোসেন) নাসিরনগরে এসেছেন প্রবীণ নেতাদের নাম মুছে ফেলার জন্য। নাম মুছে ফেলা এত সহজ নয়। আপনাকে নাসিরনগরের মাটিতে ৭ তারিখের পরে আর পা রাখতে দিব না, ইনশা আল্লাহ।’

রোমা আক্তার ও তাঁর স্বামী কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক নাজির মিয়া এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তাঁরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। পরে শুধু রোমা মনোনয়নপত্র জমা দেন, যা যাচাই-বাছাইয়ে বাতিল হয়। এখানে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী (কলার ছড়ি)। এই আসনে চারজন প্রার্থী রয়েছেন। মূলত নৌকার সঙ্গে কলার ছড়ি প্রতীকের প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা।

স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামানের নির্বাচনী সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রোমা আক্তার

নাসিরপুর বাজারের ওই সভায় রোমা আক্তার আরও বলেন, ‘আমরা যে আন্দোলন–সংগ্রাম করেছিলাম, আমাদের একটা লক্ষ্য ছিল। আমাদের লক্ষ্যটা ছিল, “সংগ্রাম হাঁটাও, নাসিরনগর বাঁচাও”। আমরা রাজকারমুক্ত নাসিরনগর চাই। আমরা যে নেতা পেয়েছি, আমরা আশা করি, আমাদের সব আশা তিনি (একরামুজ্জামান) পূরণ করবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নাসিরনগরবাসী যে অত্যাচারে আছি, আমরা যে লাঞ্ছিত, আমরা যে বঞ্চিত, আমরা যদি ওনাকে (একরামুজ্জামান) সেবা করার সুযোগ করে দিই, আমরা সব লাঞ্ছিত-বঞ্চিত জনগণ যাঁরা আছি, আমরা সুখে–শান্তিতে বসবাস করতে পারব।’

নাসিরনগরবাসী অত্যন্ত সরল-সহজ উল্লেখ করে রোমা আক্তার বলেন, ‘আমরা দাঙ্গা-ঝগড়া-হামলা চাই না। আমরা কিন্তু কোথাও কোনো বিস্ফোরণ করি নাই। তারপরও আমাদের নেতারা, বৃদ্ধ চাচারা জেল খেটেছেন। আমরা যাঁরা নেতারা আছি, সেটা আমাদের জীবনের জন্য কলঙ্ক। ছায়েদুল হকের কলঙ্ক, নেতাদের কলঙ্ক। আমরা এই অত্যাচারের নাসিরনগর আর চাই না।’ একরামুজ্জামানের পক্ষে ভোট চেয়ে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে বক্তব্য শেষ করেন রোমা আক্তার।

সভায় কলার ছড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক নাজির মিয়া, সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল আহাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রোমা আক্তারের স্বামী নাজির মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার অনেক নেতা–কর্মী ফরহাদ হোসেনের কাছে লাঞ্ছিত হয়েছেন। নেতা–কর্মীরা তাঁর কাছে সম্মান পাননি। তাই দলের নেতা–কর্মীরা তাঁর বিরুদ্ধে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে অনেক জ্বালা। তাঁকে আমরা হটাব, ব্যালটের মাধ্যমে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন বলেন, তাঁরা অনেক কিছু বলছেন। প্রশাসন এসব দেখবে এবং এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। নাসিরনগরের মানুষ যেন ভোট দিতে পারেন, সেই পরিবেশটা যেন বজায় থাকে, সেটাই তিনি চান।