আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার জেলা আওয়ামী লীগ থেকে ডাকযোগে নোটিশটি পাঠানো হয়েছে।
প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনে ডাকযোগে আবদুল মোতালেব হাওলাদারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছেন কি না, জানতে আবদুল মোতালেবের মুঠোফোনে কল করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।
খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। ৯ আগস্ট থেকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। তাঁকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে বারবার আবেদন করেও ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি ও তাঁর পরিবার। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার সুযোগ নেই। বিদেশে যেতে হলে আবারও জেলে যেতে হবে তাঁকে।
বাউফল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব বিষয়টি নিয়ে গত শনিবার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। এই পোস্টের মন্তব্যে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মোতালেবকে ধন্যবাদ জানিয়ে মন্তব্য করেন। অপর দিকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের তাঁর বিরোধী নেতা-কর্মীরা ভিন্ন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এ নিয়ে প্রথম আলোর অনলাইনে গতকাল রোববার ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান আওয়ামী লীগ নেতার’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এদিকে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি দূর করার জন্য আজ সোমবার নিজের ফেসবুক আইডি থেকে আবার স্ট্যাটাস দিয়েছেন আবদুল মোতালেব। বেলা ১১টার দিকে স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘আমাদের প্রিয় নেত্রী আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মানবতার মা হিসেবে আমি এবং দেশবাসী জানে। এ চিন্তা মাথায় রেখেই বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর কথা বলেছি। আমি ভেবেছি, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠালে আমাদের প্রিয় নেত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা, আমাদের দল আওয়ামী লীগ এবং সরকার—উভয়েরই ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে, এই চিন্তায় স্ট্যাটাসটি দিয়েছি।’
স্ট্যাটাসে আবদুল মোতালেব আরও বলেন, ‘যিনি বরিশাল বিএম কলেজের ভিপি (বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে নয়, স্বতন্ত্র) থাকা অবস্থায় ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা নিহত হলে বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর করেছেন, আনন্দমিছিল করে মিষ্টি বিতরণ করেছেন, বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুরকারীর কিছু অনুসারী আমার স্ট্যাটাসটিকে ভিন্ন খাতে নিয়ে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি দূর করার জন্যই আজকের এই লেখাটি।’
বিকেল চারটা পর্যন্ত ওই পোস্টে ২৪০ জন মন্তব্য করেন। পোস্টটি শেয়ার করেছেন ৩৯ ব্যবহারকারী। বেশির ভাগ মন্তব্যে আওয়ামী লীগ নেতাকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে। নজরুল ইসলাম নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মী মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, ‘আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে কেউ যদি বলে, আপনি বিএনপির লোক, তাহলে আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, বাউফল উপজেলায় একজন আওয়ামী লীগের লোক নাই।’