কক্সবাজার সৈকতে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। আজ বিকেলে সৈকতের লাবনী পয়েন্ট
কক্সবাজার সৈকতে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। আজ বিকেলে সৈকতের লাবনী পয়েন্ট

সমুদ্রসৈকতে তিন লাখ মানুষ, পৌনে এক ঘণ্টায় ২৪৫টি প্রতিমা বিসর্জন

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবনী পয়েন্টে আজ রোববার কয়েক লাখ মানুষের উপস্থিতিতে সাগরে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে ২৪৫টি প্রতিমা। বিকেল পাঁচটায় মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে প্রতিমা বিসর্জন শুরুর ঘোষণা দেন শহরের ঐতিহ্যবাহী সরস্বতী বাড়ি মন্দিরের পুরোহিত স্বপন ভট্টাচার্য। সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার মধ্যেই সম্পন্ন হয় প্রতিমা বিসর্জন।

প্রতিমা বিসর্জন উৎসবকে ঘিরে সমুদ্রসৈকতসহ পুরো শহরে চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয় সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এবার জেলায় ৩২১টি মণ্ডপে পূজা হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ৫৯টি মণ্ডপের ২৪৫টি প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।

জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) উদয় শংকর পাল প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিমা বিসর্জন উৎসব উপভোগ করেন তিন লাখের বেশি মানুষ। এর মধ্যে অন্তত দেড় লাখ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণে আসা পর্যটক। কোনো ধরনের অঘটন ছাড়াই প্রতিমা বিসর্জন উৎসব সম্পন্ন হওয়ায় জেলা প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

সকাল সাতটা থেকে পর্যটকেরা দল বেঁধে সৈকতে নামতে শুরু করেন। দুপুর ১২টার আগেই কলাতলী, সুগন্ধা, সিগাল ও লাবনী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সৈকতে লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটে। বেলা ২টা থেকে প্রতিমা বিসর্জন দেখতে সৈকতে নামেন আরও লক্ষাধিক মানুষ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বেলা তিনটা থেকে কক্সবাজার পৌরসভা; রামু, ঈদগাঁও, উখিয়া, টেকনাফসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ট্রাকের বহরে প্রতিমাগুলো লাবনী পয়েন্টে আনা শুরু হয়। এ সময় ভক্তরা নেচেগেয়ে আনন্দ-উল্লাস করেন। বিকট শব্দে ফাটানো হয় আতশবাজি।

বালুচরে তৈরি হয় বিজয়া মঞ্চ। বিকেল চারটার আগে দুই শতাধিক প্রতিমা বিজয়া মঞ্চের সামনে রেখে ভক্তদের পূজা–অর্চনা শুরু হয়। দুর্গাদেবীর প্রতিমায় শেষ মুহূর্তের পূজায় মগ্ন হয়ে পড়েন শত শত নারী-পুরুষ। ততক্ষণে বিজয়া মঞ্চের সামনের বালুচরে সমাগম ঘটে তিন লাখের বেশি পর্যটক, পূজারি ও দর্শনার্থীর।

বিকেল চারটার দিকে বিজয়া মঞ্চে শুরু হয় আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) উদয় শংকর পালের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ, র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান, কক্সবাজার-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা লুৎফর রহমান, কক্সবাজার পৌরসভার প্রশাসক রোবাইয়া আফরোজ, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামীম আরা, দুর্গাপূজা উদ্‌যাপন সমন্বয় পরিষদের উপদেষ্টা সোমেশ্বর চক্রবর্তী, আহ্বায়ক দুলাল কান্তি চক্রবর্তী প্রমুখ।

সভায় বিএনপি নেতা লুৎফর রহমান বলেন, ‘তিন লাখের বেশি মানুষের উপস্থিতিতে সৈকতে দেশের সর্ববৃহৎ প্রতিমা বিসর্জন উৎসব প্রমাণ করে কক্সবাজার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জায়গা। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় আমরা ঐক্যবদ্ধ।’ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, দেশের সবচেয়ে বৃহৎ প্রতিমা বিসর্জন উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হওয়ায় দর্শনার্থীরা খুশি।

বিকেল পাঁচটায় বিসর্জন মন্ত্র পাঠ করেন শহরের শতবর্ষী সরস্বতী বাড়ি মন্দিরের পুরোহিত। এরপর শুরু হয় সাগরের পানিতে প্রতিমা বিসর্জন। মাত্র ৪৫ মিনিটে একে একে ২৪৫টি প্রতিমা সাগরে বিসর্জন দেওয়া হয়।

প্রচণ্ড গরমে হাঁপিয়ে ওঠা নারী-শিশুসহ ভক্তদের সুপেয় পানি সরবরাহের পাশাপাশি পূজারি ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় বিসর্জন অনুষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করে নৌবাহিনী ডুবুরি দল, ২৭ জন সি-সেফ লাইফ গার্ড, ৩৫ জন বিচকর্মীসহ ট্যুরিস্ট পুলিশের শতাধিক সদস্য।

সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন শহরের ঘোনারপাড়ার কলেজছাত্রী শিউলী রানী। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তায় সুন্দরভাবে মা দুর্গাকে বিসর্জন দিতে পারায় তিনিসহ ভক্তরা বেশ খুশি। শিউলী বলেন, ‘বিসর্জনের মাধ্যমে মায়ের কাছে অশুভ শক্তির বিনাশ চেয়েছি। অশুভ শক্তিকে রুখে দেওয়ার মাধ্যমেই অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়া সম্ভব।’