সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় স্বস্তি, এখনো বন্যাকবলিত ৪ লাখ মানুষ

সুনামগঞ্জে মঙ্গলবার রাতে বৃষ্টি না হওয়ায় সুরমা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। বুধবার সকালে শহরের লঞ্চঘাট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জ ও এর উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত দুই দিন তুলনামূলক কম বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে পাহাড়ি ঢল নেমেছে কম। তাই জেলার প্রধান নদী সুরমার পানি কমেছে। আজ বুধবার সারা দিনেও ভারী বৃষ্টি হয়নি। এতে বন্যাকবলিত মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন।

তবে নদীর পানি কমলেও হাওরে ও গ্রামীণ জনপদে পানি অনেকটা স্থিতিশীল আছে। কোথাও কোথাও সামান্য বেড়েছে। মানুষের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটে এখনো বন্যার পানি আছে। গ্রামীণ সড়কে পানি থাকায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ। তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুর সড়কে এখনো সরাসরি যান চলাচল বন্ধ আছে।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন বলেন, এবার তাঁর উপজেলায় পাহাড়ি ঢল নেমেছে বেশি। তবে আজ পানি কিছুটা কমেছে। ভারী বৃষ্টি না হলে পানি আরও কমবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, আজ বেলা তিনটায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৮০ মিটার। এটিই এখানে পানির বিপৎসীমা। গতকাল মঙ্গলবার একই সময়ে এখানে পানি বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। তবে সুনামগঞ্জের ছাতকে এখনো সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে।

সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ২৫ মিলিমিটার। একই সময়ে চেরাপুঞ্জিতে ৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দুই স্থানেই বৃষ্টি কম হওয়ায় নদীর পানি কমেছে। তবে এখনো তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর ও সদর উপজেলায় মানুষের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটে পানি আছে। কিছু কিছু এলাকায় মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। পৌর শহরের কালীপুর, হাসননগর, পাঠানবাড়ি, বড়পাড়া, জলিলপুর ও ওয়েজখালী এলাকার মানুষের ঘরবাড়িতে পানি আছে। কালীপুর এলাকার সড়কে আজও পানি রয়েছে।

কালীপুর এলাকার বাসিন্দা বিল্লাল আমিন (৪৮) বলেন, ‘আমরার ঘরবাড়ির বেশি ক্ষতি অইছে। ঈদের দিন ঘর ছাড়ছিলাম। ১০ দিন বাইরে আছলাম। অখনো উঠানে পানি। খানি নাই। হাত খালি। কিলা ছলতাম।’ একই গ্রামের বাসিন্দা ইলিয়াছ আলী (৬০) জানান, সড়কের পাশের একটি উঁচু ভবনে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বাড়ি ফেরার জন্য যখন প্রস্তুতি নেন, তখন আবার পানি বেড়ে যায়। ইলিয়াছ বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। হাওরে মাছ ধরি খাই। বইন্যায় আমরারে শেষ করিলায়।’

মানুষের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটে এখনো বন্যার পানি আছে। বুধবার সকালে সুনামগঞ্জ শহরের লঞ্চঘাট এলাকায়

সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের চেকনিকারা এলাকা থেকে একটি পাকা সড়ক গেছে পশ্চিম দিকে ইসলামপুর গ্রামে। এই সড়ক ধরে সদর উপজেলার ইসলামপুর, হাসনবসত ও সলিমপুর গ্রামের মানুষ যাতায়াত করেন। কিন্তু সড়কে এখনো পানি থাকায় তাঁদের ভাড়া নৌকায় শহরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। স্থানীয় লক্ষণশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মনির হোসেন বলেন, ‘আমাদের এলাকার গ্রামগুলো দেখার হাওরপারে। মানুষের ঘরবাড়ি বন্যার পানি ও হাওরের ঢেউয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মানুষ দরিদ্র। সরকারি সহায়তা না পেলে মানুষ ঘরবাড়ি সংস্কার করতে পারবে না।’

সদর উপজেলার সুরমা নদীর উত্তরপাড়ের সৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক এ কে এম শামসুল ইসলাম জানান, শহর থেকে তাঁদের এলাকায় যাতায়াতের মূল সড়কটি এখনো প্লাবিত। এখনো নৌকা দিয়েই চলাফেরা করতে হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, জেলার সব জায়গায় কমবেশি বন্যা আছে। এখনো সুনামগঞ্জে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৮৩১ মানুষ বন্যাকবলিত। আজ দুপুর পর্যন্ত ৬০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১ হাজার ৮৩৭ মানুষ আছেন। বন্যার্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণের জন্য গত ১৮ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ১ হাজার ৩৩৪ মেট্রিক টন চাল, ২৬ লাখ টাকা, শুকনা খাবার ৯ হাজার প্যাকেট, শিশুখাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা ও গোখাদ্যের জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এগুলো বিতরণ অব্যাহত আছে।

সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। নদীর পানি কমেছে। হাওরেও পানি কমছে, তবে ধীরে। আগামী দুই দিন হালকা ও মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। তবে বন্যার পরিস্থিতি এ সময় অবনতি হবে না।