ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে উপজেলা ও পৌর বিএনপির সম্মেলন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের হলে দলটির দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এতে বিএনপির অন্তত ৫০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আজ সোমবার বেলা দেড়টার দিকে উপজেলা সদরের প্রতাপগঞ্জ বাজারে আনোয়ারা মার্কেটের (স্থানীয়ভাবে মুসা মার্কেট হিসেবে পরিচিত) সামনে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে বিএনপির দুই পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে।
এদিকে সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৩০ জনকে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তাঁদের মধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য চারজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বাকিরা স্থানীয় বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোর্শেদুল আলম চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, মেহেদী হাসান ও এ কে এম মুসার নেতৃত্বে উপজেলা বিএনপির সম্মেলন আয়োজনের বিরোধিতা করেন আবদুল খালেক, রফিক সিকদার ও জিয়া উদ্দিন। সম্মেলন বাতিলের দাবিতে মিছিল উপজেলার মুসা মার্কেটের সামনে এলে অপর পক্ষ বাধা দেওয়ার চেষ্টাসহ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে উভয় পক্ষের সংঘর্ষ হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, বাঞ্ছারামপুরে উপজেলা বিএনপির নেতৃত্ব ও কমিটি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। একটি পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল খালেক। আরেকটি পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে পলাশ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার লড়াই থেকেই এ বিরোধ চলছে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুজনই বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
২০২১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর জেলা বিএনপির তৎকালীন আহ্বায়ক প্রয়াত জিল্লুর রহমান ৩১ সদস্যবিশিষ্ট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। কমিটিতে আবদুল খালেককে ১ নম্বর সদস্য এবং মেহেদী হাসানকে ২ নম্বর সদস্য করা হয়। ওই কমিটির আহ্বায়ক লিয়াকত আলী ও সদস্যসচিব এ কে এম মুসা মেহেদী হাসানের অনুসারী। বিপরীতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রফিক সিকদার, জিয়া উদ্দিন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি সাইদুজ্জামান কামালসহ বেশ কয়েকজন নেতা সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল খালেকের বলয়ে রাজনীতি করছেন।
জেলা ও উপজেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ অক্টোবর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল মান্নান ও সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা ও পৌর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের তারিখ ২০ নভেম্বর ঘোষণা করা হয়। কেন্দ্রীয় কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক লিয়াকত আলী, সদস্যসচিব এ কে এম মুসাসহ তাঁদের অনুসারীরা সম্মেলনের পক্ষে রয়েছেন। সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল খালেক, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রফিক সিকদার, জিয়া উদ্দিন, সাইদুজ্জামান কামালসহ তাঁদের অনুসারীরা উপজেলা ও পৌর বিএনপির সম্মেলন বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছেন।
সম্মেলনকে সামনে রেখে আজ সকাল থেকেই উপজেলাজুড়ে বিএনপির দুটি বিরোধীপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বেলা দেড়টার দিকে আবদুল খালেক, রফিক সিকদার, জিয়া উদ্দিন, সাইদুজ্জামানের নেতৃত্বে সম্মেলনবিরোধী একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা সদরের প্রতাপগঞ্জ বাজারে মুসা মার্কেট এলাকায় পৌঁছালে উপজেলা বিএনপির অপর পক্ষ ছাদের ওপর থেকে ইটপাটকেল, কাচের বোতলসহ দেশি অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে এ সংঘর্ষ। সংঘর্ষ চলাকালে মুসা মার্কেটের সামনে রাখা পাঁচটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও বেশ কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও বাঞ্ছারামপুর থানা-পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এদিকে সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হন। এর মধ্যে ৩০ জনকে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তাঁদের মধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য চারজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল খালেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন বছর আগে আমাদের একটি অবৈধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁরা এত দিন মাঠে নামেননি। এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে মাঠে নেমেছেন। তাঁরা উপজেলার পরীক্ষিত বিএনপির ৯৯ শতাংশ নেতা-কর্মীকে বাদ দিয়ে কাউন্সিল করতে চাচ্ছেন। এই অবৈধ কাউন্সিল আমরা মানি না। কাউন্সিল বাতিলের দাবিতে আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে ছাদের ওপর থেকে হাজার হাজার ঢিল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে।’
উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ কে এম মুসা প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি নেতা আবদুল খালেক ও রফিক সিকদারের নেতৃত্বে উপজেলা সদরের দোকানে দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। উপজেলার বাইরে থেকে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ ভাড়াটে লোক এনে ব্যাপক ভাঙচুরসহ বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন তাঁরা। তাঁদের হাতে ছুরি, টেঁটা, রামদা, বল্লম ও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। পাল্টা অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে বললেই হবে? ভিডিও ফুটেজ আছে। সবাই দেখেছে, কে কী করেছে।’