মাদারীপুরে ভুল চিকিৎসায় এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর স্বজনেরা। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওই গৃহবধূর স্বজন ও স্থানীয় লোকজন শহরের পানিছত্র এলাকার কে আই হাসপাতালে ভাঙচুর চালিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এর আগেও গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর একই ধরনের অভিযোগে এই হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছিল।
মারা যাওয়া ওই গৃহবধূর নাম শারমীন বেগম (৩০)। তিনি সদর উপজেলার ছিলারচর এলাকার আনোয়ার খালাসির স্ত্রী এবং একই উপজেলার কালিকাপুর এলাকার নূর মোহাম্মদ খানের মেয়ে।
শারমীনের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি শহরের পপুলার হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শারমীন বেগম ছেলেসন্তানের জন্ম দেন। গাইনি বিভাগের চিকিৎসক সাইয়েদা সিদ্দিকা ওরফে এলিজার তত্ত্বাবধানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শারমীন সন্তান প্রসব করেন। সাত দিন পরে সুস্থ হয়ে শারমীন হাসপাতাল থেকে বাবার বাড়িতে যান। তবে দুই দিন ধরে শারমীন তাঁর মেরুদণ্ডে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করছিলেন। পরে গতকাল সকাল নয়টার দিকে শারমীনকে শহরের কে আই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসক সাইয়েদা সিদ্দিকার তত্ত্বাবধানে শারমীনের চিকিৎসা শুরু হয়। রাত ৯টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শারমীনের মৃত্যু হয়।
শারমীনের স্বজনদের অভিযোগ, মৃত্যুর বিষয়টি গোপন রেখে রাত সাড়ে ৯টার দিকে সেখানকার চিকিৎসকেরা উন্নত চিকিৎসার জন্য শারমীনকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন। ফরিদপুরে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলে শারমীনের মৃত্যুর বিষয়টি জানা যায়।
এ সময় শারমীনের স্বজনেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ঘটনার প্রতিবাদ জানালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁদের বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে শারমীনের স্বজনেরা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। কিছু সময়ের মধ্যে বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হাসপাতালের সামনের ফটকের কাচ ভেঙে দেন এবং অভ্যর্থনাকক্ষ ভাঙচুর করেন। এরপর শারমীনের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার দাবি করে হাসপাতালের সামনের সড়কে বিক্ষোভ করেন শারমীনের স্বজনেরা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
শারমীনের স্বামী আনোয়ারের অভিযোগ, ভুল চিকিৎসায় তাঁর স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি এ ঘটনার বিচার চান।
অভিযোগের বিষয়ে কে আই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ওই রোগীর বিষয়ে কিছুই জানি না। হাসপাতালে কেন তারা ভাঙচুর চালাল, তা–ও জানি না। তবে চিকিৎসকের কোনো ভুল নেই। তিনি (চিকিৎসক) সঠিক চিকিৎসাই দিয়েছেন।’
এ ঘটনার পর থেকে চিকিৎসক সাইয়েদা সিদ্দিকার মুঠোফোন বন্ধ। তাই অভিযোগের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন চৌধুরী গতকাল রাতেই ওই হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। ওই ঘটনায় স্বজনদের থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। তাঁরা অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া ওই নারীর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত ২৩ ডিসেম্বর পানিছত্র এলাকার কে আই হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায়’ লাকী আক্তার (২৭) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। পরে ওই গৃহবধূর স্বজনেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওই হাসপাতালে ভাঙচুর চালান। এদিকে ওই গৃহবধূর মৃত্যুর পর মাদারীপুর-শরীয়তপুর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন স্বজন ও এলাকাবাসী। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং হাসপাতালটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়।