কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী হাতিরডেবা আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১৭) আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সঙ্গে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনায় এক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। তাঁর নাম মো. হোসেন (৪০)। এপিবিএনের দাবি, নিহত হোসেন আরসার শীর্ষ কমান্ডার ছিলেন। এ ঘটনায় আশ্রয়শিবিরের সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আজ সোমবার ভোর পাঁচটার দিকে আশ্রয়শিবিরের সি ব্লকের রোহিঙ্গা বসতির পাশে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ২টি অস্ত্র, ১০টি গুলি, ওয়াকিটকি, মুঠোফোনসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত শুক্রবার ভোরে বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) মিয়ানমারের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসা ও আরএসওর মধ্যে গোলাগুলি হয়।
এতে আরসার ছয় সদস্য নিহত হন। এ ঘটনার পর থেকে এপিবিএনের নেতৃত্বে আশ্রয়শিবিরে যৌথ অভিযান চালানো হচ্ছে। গত দুই দিনে অস্ত্রসহ ১১ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এপিবিএনের অধিনায়ক ও পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি সৈয়দ হারুন আর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, আজ ভোরে এপিবিএনের একটি দল হাতিরডেবা আশ্রয়শিবিরের পাহাড়ি ঢালে অভিযান চালায়। এ সময় আরসার সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। ছয়টার দিকে অতিরিক্ত ফোর্স আসার পর অবস্থা বুঝে সন্ত্রাসীরা পাহাড়ের জঙ্গলে আত্মগোপন করে। ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মো. হোসেনকে উদ্ধার করে আশ্রয়শিবিরের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত হোসেন আরসার শীর্ষ কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করতেন বলে জানান সৈয়দ হারুন অর রশীদ। তাঁর নেতৃত্বে ৯, ১০, ১১ ও ১৭ নম্বর ক্যাম্পে আরসার কার্যক্রম পরিচালিত হতো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, আরসার ছয় সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। আশ্রয়শিবিরের বিভিন্ন আস্তানায় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পাল্টাপাল্টি মহড়া দিচ্ছে আরএসও ও আরসার সন্ত্রাসীরা।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, নিহত আরসা কমান্ডার মো. হোসেনের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে একাধিক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ জন রোহিঙ্গা মাঝি, ১৮ জন আরসা সদস্য, ১ জন স্বেচ্ছাসেবক এবং অন্যরা সাধারণ রোহিঙ্গা।